কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে শিকার হয়ে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদ-মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরতে পারে তার জন্য জাতিসংঘ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এমন আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
নিরাপত্তা পরিষদ ১৫ জুন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‍বুধবার (১৬ জুন) সকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ভার্চুয়াল আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন সৃষ্ট আবাসন সুবিধার তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ আবাসনব্যবস্থা জাতিসংঘ ও উন্নয়নসহযোগীরা যথাযথভাবে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, এখানে রোহিঙ্গাবিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সর্বদা জাগ্রত রাখতে অব্যাহতভাবে যেসব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, তা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি এ বিষয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ঘাটতির কথা তুলে ধরেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তাদের দায়বদ্ধতা পরিপালন করবে।
এ সময় তিনি আশা করে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক সংস্থা, দেশ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ জানান।
মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ সেশন আহ্বান করার জন্য ভলকানকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
করোনার টিকাকে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’ বা বৈশ্বিক জনপণ্য হিসেবে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন। এ ক্ষেত্রে সবার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ভলকানকে তার কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ভলকানকে আমন্ত্রণ জানান আব্দুল মোমেন।
এ সময় ভার্চুয়াল আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ভূমিকার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান ভলকান। এ ছাড়া জাতিসংঘ–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে তার অফিসকে সহযোগিতার জন্য তিনি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আলোচনার সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘে কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্কের স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা আলোচনা অনুষ্ঠানের সূচনা করে স্বাগত বক্তব্য দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বজকির উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে তার সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদুন হাদি সিনির লইয়োগো, জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু নেডিরিটু, মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ, জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরবের উপস্থায়ী প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্ট ও উইমেন পিস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু। প্যানেল আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্টের নির্বাহী পরিচালক সায়মন অ্যাডাম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন।
আলোচকেরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের মানবীয় উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা। সবাই এ সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেন।
আলোচকরা বলেন, এ সমস্যার শিকড় মিয়ানমারে নিহিত। প্যানেল আলোচকরা মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরূপণের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র, সুশীল সমাজসহ অন্যান্য অংশীজন এ ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন।
একই দিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বজকিরের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনার টিকাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় উঠে আসে।
জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর উচ্চ প্রতিনিধি ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতা মোইলোয়া কাটোয়া উতয়কামানুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তারা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর টেকসই ও অপ্রত্যাবর্তনযোগ্য উত্তরণ নিয়ে কথা বলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠেয় এলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে একটি সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফলাফল অর্জনে বাংলাদেশ সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে বার্মার রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নির্মূল ও অন্যান্য ভয়াবহ নৃশংসতা ও নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল তারা।

পাঠকের মতামত: