কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লকডাউন: ক্ষুধা-শঙ্কা-হতাশায় গৃহবন্দী একটি মাস

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে বিশ্বব্যাপী চলছে লকডাউন। মহামারি ঠেকাতে বাংলাদেশেও চলছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি।

ছুটিতে কারণে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মব্যস্ত মানুষের জীবন। থেমে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার চাকা। অসহায় জীবন-যাপন করছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও।

বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষ বেতন ও চাকরি হারানোর ভয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন। ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীরা লকডাউনে পুঁজি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত।

ক্ষুধার কাছে অসহায় দরিদ্র মানুষ সামাজিক দূরত্বকে উপেক্ষা করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে বের হচ্ছেন রাস্তায়। লকডাউনের এক মাসে ঘরবন্দী মানুষ সবকিছু মিলে বিরক্ত ও বিষণ্নতায় ভগছেন।

এসব ক্ষয়ক্ষতি মেনে বিপুলসংখ্যক মানুষ একমাস ঘরে থাকলেও দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। রোববার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪১৬ জন। সবকিছু মিলিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষজন।

নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের এখন একটাই প্রশ্ন— কবে শেষ হবে এই অবরুদ্ধ জীবন?

এক মাসের লকডাউনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেসকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জীবনের সবচেয়ে বীভৎস সময় কেটেছে এই একটা মাস। কোম্পানি থেকে একমাসের বেতন আটকা। বলে দিয়েছে এভাবে চলতে থাকলে বেতন অর্ধেক হবে। আরো খারাপ অবস্থা হলে কোম্পানির চলা নিয়েই দুশ্চিন্তা। এত টেনশন নিয়ে কি ঘরে বসে থাকা যায়। কী অস্থির সময় কাটছে  তা বলে বোঝানো যাবে না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এক মাসের লকডাউনে দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আর কিছুদিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়বেন। নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষুধা নিবৃত করতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাবেন। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষের জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে। ঘরবন্দী মানুষ নানার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। অর্থ সংকটের কারণে পারিবারিক কলহ বিবাদও বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারকে লকডাউন নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, এক মাস লকডাউন করেও সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু, বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের উপার্জনের পথ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনাভাইরাসের যে পরিস্থিতি তাতে এই মুহূর্তে বা আরো কিছুদিন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন করাই প্রধান পরিকল্পনা হতে হবে এবং এর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার তো পুরো দেশ লকডাউন করেনি। স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত আকারে লকডাউন করা হয়েছে। লকডাউন মানে বোঝায়, সবকিছু থেমে যাওয়া। সেটা তো আমাদের দেশে সম্ভব না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে ত্রাণ দিতে পারলেও সবার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে পারবে না সরকার। তাই, সাধারণ ছুটির মাধ্যমে চলাচল সীমিত করে বা কিছু বন্ধ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন করতে হবে। এজন্য সাধারণ ছুটির প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, শুরু থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে না। খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, এজন্য কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। সরকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন উপযুক্তভাবে এসব পরিপালন করতে হবে। কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। শ্রমিকের ঘরে খাবার দিতে হবে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সবকিছু খুলে দিলে ভবিষ্যতে আরো সমস্যা হবে। অর্থনৈতিক ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে। এজন্য মানুষের ন্যূনতম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন  বলেন, করোনাকালীন এ দুর্যোগে মানুষ ঘরবন্দী, অসহায়। একদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি অন্যদিকে খাবারের চিন্তা, চাকরির চিন্তা, বেতনের চিন্তা সবকিছু মানুষ অসহায় করে তুলেছে। এ সময় প্রয়োজন সাহস ও ধৈর্য্য। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়ে মানুষকে সাহস দিতে হবে। ছুটির সময়টাতে মানুষকে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। যথাযত উদ্যোগ না নিলে মানুষ বিষণ্নতায় কর্মশক্তি হারাবে, অবসাদে ভুগবেন।

পাঠকের মতামত: