কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে সরকার

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এরইমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধাবর (১৪ এপ্রিল) থেকে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এই ‘লকডাউন’ চলবে। তবে সরকার প্রজ্ঞাপনে ‘লকডাউন’ শব্দটি ব্যবহার করেনি।

সরকার মাত্র ৭ দিনের এই বিধি-নিষেধ ঘোষণা করলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে না এলে বিধি-নিষেধের সময় আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

করোনা সংক্রমণের গত এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ এখন সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর চলতি বছর এপ্রিলে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপর্যয় ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা ছাড়া সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি থামার কোনো লক্ষণ নেই বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ফলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর মার্চের শেষ দিকে যখন করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে তখনই সরকার এর ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে লকডাউনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু দেশের অর্থনীতি ও শ্রমজীবী মানুষের জীবিকার বিষয়টি সামনে চলে আসায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শিথিলতার কারণে পরিস্থিতি বর্তমানে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং দ্রুত গতিতে অবনতি ঘটছে। গত বছর করোনার সংক্রমণ চলতি বছর দ্বিতীয় তরঙ্গের চেয়ে অনেকটা ধীরগতি ছিলো। গত বছর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। গত বছর ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিলো ৪ হাজার শর মতো এবং একদিনে মৃত্যু ছিলো সর্বোচ্চ ৬৪ জন। কিন্তু দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হওয়ার পর এবার ইতোমধ্যে সংক্রমণ সাড়ে ৭ হাজার ছাড়িয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টায় প্রাণহানী ৮৩-তে পৌঁছেছে। এবারের এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকার যে ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এটা সংক্রমিত রোগীকে দ্রুত মারাত্মক অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে সংক্রমণের সাথে সাথে মুত্যুর হারও বেড়ে যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি সরকারকে বিচলিত করে তুলেছে। এ অবস্থায় মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই করোনার কারণে অনেক কিছু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপন্ন। এই অবস্থা উপলব্ধি করে কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা না মানে, স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাকে কিন্তু মানানো কঠিন। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবাইকে সম্মিলিতিভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জীবন না থাকলে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে। এ কারণে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জীবনের জন্য তা সবাইকে মেনে চলতে হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন থাকবে, তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটেরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে আপনাদের ঘরের বাইরে দেখতে চাই না। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

পাঠকের মতামত: