কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লবণ চাষীদের মুখে হাসি

 

লবণের বাম্পার উৎপাদনে চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। সন্তোষজনক মূল্য পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন চাষীরা। বিসিক সুত্রে জানা যায় চাহিদামত লবণ উৎপাদন হয়েছে তাই ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই। এতে আগামী মৌসুমে চাষীরা আরো আগ্রহী হবেন এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লবণের সন্তোষজনক মূল্য ও বাম্পার উৎপাদন হওয়ায় চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। দীর্ঘ ৮ বছর পর এই বছরই লাভের মুখ দেখেছেন চাষীরা। এতে লাভবান হয়েছেন জমির মালিক ও লবণ ব্যবসায়ীরা।
বিসিক সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লবণের চাহিদা ছিল ২৩ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে লবণ উৎপাদন পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এরপরও প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশী লবণ চাষীরা জমিয়ে রেখেছে। যা এখন হিসেবে আসেনি। এই মৌসুমে যা উৎপাদন হয়েছে তা বিগত যেকোন মৌসুমের তুলনায় অনেক বেশী।

কক্সবাজার লবণ চাষী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সাজেদুল করিম জানিয়েছেন লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এর ব্যাপক তৎপরতায় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে এসেছে। লবণ আমদানি বন্ধ করতে তিনি প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছেন। লবণের যাতে ঘাটতি না হয় তাই লবণ উৎপাদনে আরো মনযোগী করতে চাষীদের তিনি বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। যার সুফল পাচ্ছেন চাষীরা।
লবণ ব্যবসায়ী কালারমারছড়া মনজুর আলম বাদশা জানিয়েছেন বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ ২৮০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে আরো বাড়বে। চাষীরা বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রিত রেখেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি থাকলে আগামী মৌসুমে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ আরো বাড়বে। বর্তমানে চাষীরা সন্তোষ্ট। যেখানে চাষ করার জন্য চাষী পাওয়া যায়নি সেখানে লবণ জমি ইজরা নেওয়ার জন্য এখন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডীর চাষী ফরিদুল আলম জানিয়েছেন লবণের দাম বাড়ায় চাষের জমি আগামী মৌসুমে আরো বাড়বে এতে সন্দেহ নেই। অনেকেই লোকসান যাওয়ায় লবণ মাঠের জমিতে ধান রোপন করেছিলেন। তারা আবার লবণ মাঠে ফিরে যাবে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারে প্রায় ৬ লাখ মানুষ বিভিন্ন ভাবে লবণ ব্যবসায় জড়িত। কেউ সরাসরি চাষে, কেউ জমির মালিক, কেউ শ্রমিক ও কেউ ব্যবসায়ী হিসেবে আয়ের প্রধান উৎস লবণ। এতে গত কয়েক বছর ক্রমাগত লোকসান যাওয়ায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। যার ফলে অনেকেই পেশার পরিবর্তনও করেছেন। এই সুযোগে কিছু মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী তাদের স্বার্থ হাসিল করতে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিদেশ থেকে সালফার ডাই অক্সাইড মিশ্রিত লবণ ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার পরিমাণের চেয়ে বেশি লবণ আমদানি করে বাজারের সয়লাব করায় দেশীয় লবণ ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন চাষীরা। ফলে অনেকেই লবণ উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
বিসিক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, দেশে লবণের ঘাটতি হওয়ার তেমন সম্ভবনা নেই। চলতি মৌসুমে চাহিদামত লবণ উৎপাদন হয়েছে। তাই লবণ আমদানীর কোন প্রয়োজন নেই। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সকল মহলকে একযোগে কাজ করতে হবে। লবণ উৎপাদন আরো বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, একটি চক্র লবণ শিল্পকে ধংস করে ফায়দা লুটতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন লবণ চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করবেন। তিনি যা বলেন তা বাস্তবায়ন করেন। লবণ চাষীরা প্রধানমন্ত্রীর উপর পুর্ণ আস্থা রেখেছে বিধায় এখন সুফল পাচ্ছেন। এই চক্রটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করে আসছে দীর্ঘদিন। বেশী চাহিদা সৃস্টি করে ঘাটতি দেখিয়ে লবণ আমদানি করে দেশে লবণ উৎপাদনে বিঘ্ন সৃস্টি করে আসছেন প্রতি বছর। এটি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। লবণ আমদানির শুল্ক বৃদ্ধি করে দেশীয় উৎপাদিত লবণের সমপর্যায়ে নিয়ে আসলে লবণ আমদানির ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে।

পাঠকের মতামত: