কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সমুদ্র সৈকতে সচেতনতার মাইকিং শুনছে না কেউ, ব্যস্ত আনন্দ-হৈ-হুল্লোড়ে!

সুজাউদ্দিন রুবেল::

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ভিড় করেছেন লাখো পর্যটক। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মাঝেও মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই সৈকতে। তারপরও মাইকিংয়ের মাধ্যমে পর্যটকদের সচেতন করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। কিন্তু ওই মাইকিং কানেই তুলছে না আগত পর্যটকরা। আর প্রশাসনের অভিযান শুরু হলেই সৈকতে ধুম পড়ে মাস্ক কেনার।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন; তাই অন্য দিনের চেয়েও সৈকত শহর কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বেশি। উৎসব মুখর সাগরতীর। তবে পর্যটকরা কেউ মানছেন না করোনার স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক পরা নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে চরম অনীহা। দিচ্ছেন নানা অজুহাত।
চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক অনিক বলেন, ‘মাস্ক নিয়ে আসছিলাম। এখন পানিতে নামব তাই ফেলে দিয়েছি। পানিতে নামলে তো মাস্কটা ভিজে যাবে। পরে মাস্ক কিনে পরবো।’

ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক ওয়াজেদ ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরা বিষয়টা অনীহা নেই। বিষয়টা হচ্ছে, বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। এটার জন্য কক্সবাজার ছুটে আসা। এখন স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহার কেউ মানছে না।’
শামসুল আলম নামে এক পর্যটক বলেন, ‘মাস্ক সামনে আছে, সামনে গিয়েই পরব। বন্ধুরা সবাই মিলে সৈকতে আসছি, কেউ সামনে চলে গেছে, তাদের হাতে মাস্ক রয়েছে। একটু সামনে গিয়ে তাদের খুঁজে মাস্ক নিয়ে ব্যবহার করব।’
আরেক পর্যটক হিমেল বলেন, ‘এখন তো সৈকতে উৎসব চলছে। এই উৎসবে আমাদের তো সচেতনতা অনেক কম, আগের মতো নেই বললেই চলে। তারপরও চেষ্টা কবর মাস্ক ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকতে। কারণ আমরা সুরক্ষিত থাকলে দেশও সুরক্ষিত থাকবে।’
এদিকে শুক্রবার (১৯ মার্চ) সরেজমিনে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক এসব পয়েন্টে ভিড় করছে। আগত পর্যটকরা সৈকতে পানিতে, বালিয়াড়ি ও কিটকট (ছাতায়) বসে আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে রয়েছেন। আর তাদের আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে হার মেনেছে করোনার স্বাস্থ্যবিধি। কেউ মানছেন না সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক ব্যবহার। আর যারা মাস্ক ব্যবহার করে সৈকতে নেমেছেন তারাও কিছুক্ষণ পর সৈকতের বালিয়াড়িতে ফেলে দিচ্ছেন ব্যবহৃত মাস্কটি। দেখা যায়, বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে শত শত ব্যবহৃত মাস্ক।
সি-সেইভ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণে লাইফ গার্ডের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করি। কিন্তু যেসব পর্যটকরা সৈকতে মাস্ক পরে আসে, তারা ওই মাস্ক ব্যবহার করে সৈকতে ফেলে দিচ্ছে। যার কারণে সৈকতের বালিয়াড়ি নোংরা হয়ে পড়ছে। তারপরও চেষ্টা করি, বালিয়াড়ি থেকে ব্যবহৃত মাস্কটি তুলে ডাষ্টবিনে ফেলার। তবে এক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।’
এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক এরশাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনই সৈকতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আগে পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতাম। এখন পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কারণ করোনার জন্য পর্যটকদের সচেতন করতে মাইকিং, টহলরত মাইকিং, বীচ বাইকযোগে মাইকিং ও পর্যটকদের লিফলেট বিতরণ করছি। এছাড়া পর্যটক সাথে কথা বলে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
এরশাদ হোসেন আরও বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেক পর্যটক আসে। তারা সবাই নতুন। সবাইকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করছি, কিন্তু নতুন পর্যটক যারা আসে তারা বলেন সৈকতে প্রবেশের নিয়ম-কানুন তারা জানে না। তারপরও পর্যটকদের বেশি বেশি মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতন করছি। আশা করি, পর্যটকরা সচেতন হয়ে উঠবে।’
এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে করোনার সংক্রমণ রোধে সৈকতে অভিযানে নামে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। মুহূর্তেই পাল্টে যায় সৈকতের চিত্র। ধুম পড়ে সৈকতে আগত পর্যটকদের মাস্ক কেনার। ৪টি পয়েন্টেই যারা সকাল থেকে মাস্ক ব্যবহার করেনি, তাদের দেখা গেছে মাস্ক কিনে ব্যবহার করতে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে পর্যটকদের সচেতন করতেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এটি ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে। এখন পর্যন্ত ৫০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে জরিমানা মুখ্য বিষয় নয়; মূলত পর্যটকদের সচেতন করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: