কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাইনবোর্ডে ‘সীমাবদ্ধ’ ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা

দেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান ছেঁড়া দ্বীপ বা ছেঁড়াদিয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই ছেঁড়া দ্বীপ বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। একদিকে দেশের শেষ বিন্দু, অন্যদিকে সাগরের নীল পানি, প্রাকৃতিক জীবন্ত পাথর আর শুভ্র নীল আকাশের মিতালির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসেন বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে।

ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের অসাবধানতা, অসচেতনতার ফলে প্রবাল দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। সে কারণে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক বিনা বাধায় ছেঁড়া দ্বীপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

‘সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকারের অধিগ্রহণ করা ছেঁড়াদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ করা যাবে না’ এবং ‘ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে স্পিডবোট, কান্ট্রি বোট, ট্রলার কিংবা অন্যান্য জলযানে যাতায়াত কিংবা নোঙর করা যাবে না’- এমন বিধিনিষেধ দিয়ে চলতি বছরের শুরুতেই সরকারের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। এ বিজ্ঞপ্তিতে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে— দ্বীপের সৈকতে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চালানো যাবে না।

অথচ প্রতিদিন শত শত মানুষের পাশাপাশি ছেঁড়া দ্বীপের বুকের ওপর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য বাইসাইকেল। শুধু বাইসাইকেল না, মোটরসাইকেলের চাকাও পড়ছে ছেঁড়া দ্বীপের বুকে, যা দ্বীপটির বিরল প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতেও উল্লেখ করা হয়, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিবেশ এবং প্রতিবেশবিরোধী আচরণের কারণে সেন্টমার্টিনের বিরল প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।

সরকারের পক্ষ থেকে এমন গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের কোনো চিত্র দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য ছেঁড়া দ্বীপের আগে সমুদ্র সৈকতে ‘ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’ এমন একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা এ সাইনবোর্ডের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ।

সেন্টমার্টিন বাজার থেকে বাইসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপে আসা আশিকুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপ না এলে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং সেন্টমার্টিনের যে সৌন্দর্য দেখতে আসা তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। কারণ সেন্টমার্টিনের আসল সৌন্দর্য ছেঁড়া দ্বীপ।

তিনি বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমন কথা শুনেছি। তবে সেন্টমার্টিন এসে জানতে পেরেছি এখনো সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি। যে কেউ ইচ্ছা করলেই ছেঁড়া দ্বীপে যেতে পারছেন। আমরা তিন বন্ধু মিলে সাইকেল ভাড়া করে ছেঁড়া দ্বীপে এসেছি। একেকটি সাইকেলের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৪০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে।

আশিকুর রহমান বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণের জন্য সাইকেল সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। সাইকেল চালাতে চালাতে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করা যায়, তেমনি খরচও সাশ্রয় হয়। কারণ বোটে আসতে জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা দিতে হয়। সাইকেল নিলে ১০০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়।

মোটরসাইকেলে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া আরিয়ান নামের একজন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ঘুরে দিনে দিনে ফিরে যাব। এ জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ করতে এসেছি। মোটরসাইকেলে যত দ্রুত ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরে আসা যায়, অন্য কোনো মাধ্যমে তা হয় না। এক ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া ২০০ টাকা দিতে হবে।

ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কিছু জানেন কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ করা যাবে না, এমন কিছু আমি শুনিনি। তবে আসার পথে সৈকতে একটি সাইনবোর্ড দেখেছি। কিন্তু সবাই তো ছেঁড়া দ্বীপ যাচ্ছে। কেউ কোনো বাধা দিচ্ছে না। তাহলে আমরা আসলে সমস্যা কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপ যে কী সুন্দর তা যে না দেখেছে তাকে গল্প বলে বোঝানো যাবে না। সমুদ্রের পানি যে এতো স্বচ্ছ হয় তা এখানে না আসলে বোঝা যাবে না। স্বচ্ছ পানি আর পাথরের মধ্যে রঙিন মাছ খেলা করছে। দেখে মনে হবে অ্যাকুরিয়াম। উপর দিকে তাকালেই দেখা যাবে, নীল-সাদা আকাশ, যেন মাথার সঙ্গে লেগে আছে। এমন সুন্দর দৃশ্য আর কোথাও দেখতে পারবে না। শুধু গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে এমন সুন্দর জায়গা ভ্রমণ থেকে আটকানো যাবে বলে মনে হয় না। ছেঁড়া দ্বীপের ভ্রমণ আটকাতে হলে অবশ্যই প্রশাসনকে কঠোর অবস্থায় যেতে হবে এবং সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতর থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভ্রমণকারীদের ছেঁড়া দ্বীপে অবাধে যাতায়াত এবং সৈকতে সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়টি তুলে ধরা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আগে আমাকে দেখতে হবে। তারপর এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো।’

পাঠকের মতামত: