কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সিন্ডিকেটের ফাঁদে চামড়া শিল্প, দাম না থাকায় লোকসানে ব্যবসায়ীরা

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর নওগাঁয় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম একেবারে নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক বাজার ও ভারতে চামড়ার দাম বেশি হলেও ট্যানারি মালিকদের দু’টি সংগঠন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া এবং দীর্ঘদিন ধরে জেলা পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। তবে এবছর চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা ও বন্যার কারণে এবার তুলনামূলক কম পশু কোরবানি হয়েছে। তবে আগের বকেয়া টাকা থেকে মাত্র ৮ শতাংশ পরিশোধ করায় নতুন করে চামড়া কিনতে আগ্রহী নন জেলার চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ। ফলে এবার গ্রাম কিংবা পাড়া মহল্লা থেকে চামড়া কেনার ফরিয়া ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের দামসহ মূলধনের পুরোটা তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।

এবারের ঈদে ৫-৬ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনার সম্ভাবনা থাকলেও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর ঈদুল আজহার দিনে নওগাঁয় বিভিন্ন জায়গায় চামড়ার বিশাল বাজার বসে। বিভিন্ন এলাকা ও গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া কিনে এনে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বাজারে ভিড় জমায়। এ বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। লবণসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। কোম্পানিরা যদি ভালো দাম দেয় তাহলে লোকসান গুনতে হবে।

এবছর কোরবানির ঈদে নওগাঁয় ৫০ হাজার গরু, ৩৫ হাজার খাসি ও ১৫ হাজার ভেড়ার চামড়া কেনা-বেচার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও করোনা এবং বন্যার কারণে কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
রাণীনগরের এনায়েতপুর থেকে আসা ফরিয়া চামড়া বিক্রেতা রহমত আলী বলেন, ‘গরুর চামড়া কিছুটা দাম পাওয়া গেলেও ছাগল ও ভেড়ার চামড়া কেউ নিতে চাচ্ছে না। ভালো মানের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। অথচ আমরা কিনেছি ৪০০-৪৫০ টাকায়। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া আমরা কিনেছি ১৫-২০ টাকায়। কিন্তু কেউ তা নিতেই চাচ্ছে না। অনেকেই চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছে। চামড়ায় লাভ হওয়া তো দূরের কথা পুঁজিই থাকছে না।
চামড়া ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চামড়া জাতীয় সম্পদ বলেই সরকার নির্ধারিত দামের বেশি দিয়ে চামড়া কিনছি। ট্যানারি মালিকরা যদি একটু লাভ দিয়ে চামড়া নেয় সেই আশাতেও চামড়া কিনছি। কিন্তু তার তো আমাদের পথে বসানোর পাশাপাশি দেশের চামড়া শিল্পটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘চাপের কারণে আমরা চামড়া কিনছি। সরকারের বেধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনছি। ফরিয়া ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদেরকে চামড়া সরবরাহ করে আসছে। তারাও এই আনন্দের দিনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চামড়া কিনে আমাদের কাছে সরবরাহ করেন। তারাও তো কিছু আশা করে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই চামড়া কিনছি। তবে সরকার ও ট্যানারি মালিকরা যদি আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দিত তাহলে শিল্পটি আবার তার ঐতিহ্যটি ফিরে পেতো।

পাঠকের মতামত: