কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

১৮ রোহিঙ্গার জন্মসনদ বাতিলে চসিকের চিঠি

সবুর শুভ::

সেই ‘১৮ রোহিঙ্গার’ জন্য ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিলে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। চসিকের সুরক্ষিত সার্ভার হ্যাক করে এসব জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করে হ্যাকাররা। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুজাম্মেল হক (সাবেক) স্বাক্ষরিত এ চিঠি গত ১৭ জুন পাঠানো হয়। এরই মধ্যে আলোচিত এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কাউন্টার টেরোরিজমের চট্টগ্রাম ইউনিট। চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যুর স্থান সংশ্লিষ্ট তিন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। তবে লকডাউনের কারণে পুরোদমে তদন্ত কাজ পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে হ্যাকিং এর বিষয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নজরে আসার পর নগরীর দুই থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনের সুরক্ষিত জন্ম নিবন্ধনের সার্ভার হ্যাক করে ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে ৭টি ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড থেকে ৪টি এবং চকবাজার ওয়ার্ড থেকে ৭টি জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়। চকবাজার ওয়ার্ড থেকে ইস্যু দেখানো সনদগুলোতে ৭ জনই বর্তমান ঠিকানার কলামে নগরীর ঠিকানা ব্যবহার করেছে। আর বাকী ১১টিতে স্থায়ী ও বর্তমান দুই ঠিকানাই ব্যবহার করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা।

জানা গেছে, গত ৮ জুন নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের নিবন্ধন সহকারী মো. এমদাদুল হক। একই দিন পতেঙ্গা থানায় আরেকটি মামলা করেন ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের নিবন্ধন সহকারী রতন কুমার চৌধুরী। ৯ জুন চকবাজার থানায় মামলা করেন ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের নিবন্ধন সহকারী মোহাম্মদ আহাসান করিম।

মামলাগুলোর এজাহারে অজ্ঞাতনামা হ্যাকারদের আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২২, ২৪, ২৬, ৩৩ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার আহমদ পিয়ার জানান, সুরক্ষিত সার্ভার হ্যাক করে জন্ম সনদ ইস্যু করার মামলাগুলো আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে পুরো চক্রকে ধরার চেষ্টা করছি। বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তিগত হওয়ায় তদন্তে সময় লাগছে।

এদিকে উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী মো. এমদাদুল হক বলেন, সিটি করপোরেশনের যাবতীয় জন্ম নিবন্ধন বর্তমানে অনলাইনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয়। জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্যাবলী প্রথমে জন্ম নিবন্ধন সহকারীর আইডিতে আসে। এরপর অধিকতর যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের আইডিতে পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করার পর আবার নিবন্ধন সহকারীর কাছে পাঠানো হয়। এরপর জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট কাগজে প্রিন্ট হলে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেন। করোনা পরিস্থিতির এ সময়ে সফটওয়্যার হালনাগাদ কার্যক্রম চলার কারণে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড অফিস থেকে কোন জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়নি। সফটওয়্যার হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ হলে আবার শুরু হয় নিবন্ধন।

এরই প্রেক্ষিতে নিয়ম অনুসারে গত ২৮ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নতুন করে পাসওয়ার্ড ইস্যু করা হয়। এ পাসওয়ার্ড দিয়ে ১ মার্চ থেকে কাজ শুরু করতে গেলে দেখা যায় র্সাভার হ্যাক হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, হ্যাকাররা জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ইউজার আইডিতে প্রবেশ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ৭টি নতুন জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করে। সনদ ইস্যু করতে যাদের নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে তারা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার মওলানা নুরুল আলমের মেয়ে মোছাম্মৎ সোমাইয়া, টেকনাফ ডেইলপাড়ার মৃত মো. আয়াছের মেয়ে নাজমা বেগম, টেকনাফ সদরের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র মেয়ে ফাতেমা খাতুন, কক্সবাজার ভারুয়াখালীর ফরিদুল আলমের মেয়ে রোকেল, কক্সবাজার উত্তর কলাতলীর ছৈয়দ আলমের মেয়ে ছফুরা বেগম, রামুর মো. ইউনুছের ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ও টেকনাফ পৌরসভার কালামিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মোবারক।

দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে একই কায়দায় চারটি জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়। ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী রতন কুমার চৌধুরী বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সার্ভার হ্যাক করে চারজনের নামে জন্ম নিবন্ধন ইস্যু দেখানো হয়। এদের মধ্যে টেকনাফ পৌরসভার বশির আহমদের মেয়ে হামিদা বেগম, রামুর গর্জনিয়ার কবির হোসেনের মেয়ে সাহেনা, একই এলাকার আলী হোসনের ছেলে মিনার ও টেকনাফ পৌরসভার আবুল কালামের মেয়ে সুমি আক্তারের নাম রয়েছে।

চকবাজার ওয়ার্ড থেকে ইস্যু করা ৭টি জন্ম সনদের ব্যাপারে ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী মোহাম্মদ আহাসান করিম জানান, হ্যাকাররা ১৪ ফেব্রæয়ারি সার্ভারে প্রবেশ করে চকরিয়ার মাইজপাড়ার আহমদ ছবির মেয়ে রিনা আক্তার, শেখ মামুন মোরশেদের ছেলে মোস্তাছির মোর্শেদ ওয়াছি, জানে আলমের মেয়ে রাশেদা বেগম ও মো. ছিদ্দিকের ছেলে তকদির উল্লাহ’র সনদ ইস্যু করে। তাদের সবার স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজর জেলা দেখানো হলেও বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ২৫৯, জমিলা হাউস, নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোডে।

চকবাজার জয়নগর এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে আনোয়ার নামের একজনের মেয়ে হিসেবে তাসলিমা আকতারের সনদ ইস্যু করে হ্যাকাররা। হায়দার আলীর ছেলে মো. আকবর ও মুহাম্মদ শামসুল আলমের ছেলে মুহাম্মদ মুনিরুল মান্নানের জন্ম সনদ ইস্যু দেখানোর ক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা (যুগ্ম জজ) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, এ রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম শহরে এসে হ্যাকারের মাধ্যমে জন্ম সনদ ইস্যু করার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। কারণ যেসব সনদ ইস্যু করা হয়েছে তাদের সকলেরই স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার, টেকনাফ ও চকরিয়ায়। পূর্বদেশ

পাঠকের মতামত: