কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

১৯৯৯ সালের পর ‘আম্ফান’ এই অঞ্চলে প্রথম ‘সুপার সাইক্লোন’

বৈশ্বিক ঝড় নির্ণয়ক বিখ্যাত সংস্থা আকুওয়েদার আম্ফানকে ১৯৯৯ সালের পরে বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোন হিসাবে বর্ণনা করেছে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়ে এটি বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতীয় উপকূলজুড়ে চরম আঘাত হানতে পারে।

আকুওয়েদারের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক পূর্বাভাসক জেসন নিকোলস বলেছেন, ১৯৯৯ এর উড়িষ্যা সাইক্লোনের পরে আম্ফান বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোনিক ঝড়। বুধবারের শেষের দিকে দু’দেশের উপকূলরেখায় এটি আঘাত হানতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংস্থা জানিয়েছে, আজ প্রত্যুষে

ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এখানকার অনুকূল পরিবেশ এটিকে আরো শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করছে।

মার্কিন যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের বরাত দিয়ে আজ সকালে সিএনএন জানিয়েছে, সোমবার রাতে দেখা যায়, আম্ফান বঙ্গোপসাগরে এ যাবত কাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হয়ে উঠেছে, এটি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত (ঘণ্টায় ১৬৫ মাইল) অব্যাহত বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে তীব্রতর হচ্ছে।

বাংলাদেশি এবং ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা এটিকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমে সরে যাওয়ার এবং ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নিকটবর্তী হাতিয়া-ভোলা এবং ভারতের দিঘার মধ্যবর্তী দুটি দেশের উপকূলরেখা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়ে আজ সকালে বাংলাদেশি ও ভারতীয় মিলিত অফিস তাদের প্রতিবেদন আপডেট করেছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকাল

৯টায় সুপার সাইক্লোনটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজারের ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দরের ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সকাল পর্যন্ত গত ছয়

ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি প্রতি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে এগিয়েছে।

আকুওয়েদার বলেছে, সর্বশেষ গতিবিধি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আম্ফান উপকূলীয় তটরেখা বরাবর এসে একটি সুপার সাইক্লোন অথবা একটি অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।

আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে,

স্থলভাগে আঘাত হানার সময় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ জুড়ে জীবন ও সম্পদের জন্য চরম হুমকী হয়ে উঠবে বলে আশংকা করা হচ্ছে- যাতে যুক্ত হতে পারে ভয়ঙ্কর উপকূলীয় ঝড়, ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস।

এটি বিশেষতভাবে সতর্ক করে দিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণে খুবই ন্মিমাঞ্চল হওয়ায় আম্ফানের প্রভাবের উচ্চ জ্বলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলটি প্লাবিত হওয়ার আশংকা সবচেয়ে বেশি। আকুওয়েদারের পূর্বভাস অনুসারে আম্ফান সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়োহাওয়ার সঙ্গে ‘সুপার সাইক্লোনিক ঝড়’ হয়ে ওঠেছে আম্ফান, যা আটলান্টিক এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকায় বিভাগের ক্যাটাগরি-৫

হারিকেন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৯ ওড়িষ্যায় ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২৬০ কিলোমিটার।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সর্পিল গতিতে এগিয়ে আসা ঝড়টির শনিবার বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিওএমও) থাইল্যান্ডের প্রস্তাবের আলোকে নামকরণ ‘আম্ফান’

করা হয়। অ্যাকুওয়েদার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গলবার উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরতে শুরু করে আম্ফান, এর তীব্রতা (২২০ কেপিপি/ঘণ্টা) বজায় রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশি ও ভারতীয় মিলিত অফিসগুলোর প্রতিধ্বনিতেই এই মার্কিন সংস্থা জানিয়েছে, বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সীমান্ত

বরাবর তটভূমিতে আঘাত হানতে পারে। এত বলা হয়, ‘তাহলে এই পথেই কলকাতায় সরাসরি আঘাত হানতে পারে।’

আকুওয়েদারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদিও তারা ধারণা করেছিল যে, ঝড়টি তটভূমিতে আঘাত হানার আগে সামান্য দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখনও

একটি বিপজ্জনক ঝড় হয়েই আছে’।

আকুওয়েদারের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ অ্যাডাম ডাউটি মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিশাল নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে, কারণ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ঝড়ো হাওয়া জলোচ্ছ্বাসকে প্রবাহিত করবে।’

আবহাওয়াবিদরা আশংকা করেছেন, অমাবস্যার প্রভাবের কারণে আম্পান ঘূর্ণিঝড়টি বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করে বিশেষত, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের মধ্য উপকূলের অঞ্চলগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি প্লাবিত হতে পারে।

সিএনএন টেলিভিশনের বিশেষজ্ঞদের

বরাত দিয়ে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, ঝড়টি প্রবল বেগে উপকূলীয় তটভূমিতে আঘাত করে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সেখানে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। ৩০ ফুট পর্যন্ত উচ্চ (৯ মিটার) জলোচ্ছ্বাসের আশংকাও রয়েছে ।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, আম্পান উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশের জন্য প্রাণহানীকর ঝড়ে রূপ নিয়েছে। যদিও সুপার সাইক্লোনটি এই বছর উত্তর

গোলার্ধে সবচেয়ে বেশি তীব্র আকার ধারণ করেছে, এটি বঙ্গোপসাগরের রেকর্ডকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।

আকুওয়েদার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, এর আগের ঝড়গুলো একই ধরণের পথ অনুসরণ করেছিল, অতীতে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ে হাজার-হাজার

মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, যা অবশ্য দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬৬ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং প্রাণহানীর হিসাবে এটিকে বিশ্ব ইতিহাসের পঞ্চমতম সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় হিসাবে কুখ্যাত হয়ে আছে।

আকুওয়েদার ধারণা করেছিলো, বৃহস্পতিবার উপকূলীয় ভূমিতে আঘাত হানার সময় আম্ফান দ্রুত বাতাসের গতি হারাবে, তবে সতর্ক করে দিয়েছিল যে বর্ষণের ফলে বন্যার সমস্যা সপ্তাহের শেষের দিকেও অব্যাহত থাকবে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়টি প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা বহন করবে এবং পূর্ব ওড়িষ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ,

বিহার এবং বাংলাদেশ পর্যন্ত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ১০০-২০০ মি.মি. (৪-৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপকূলে আঘাত হেনে ঝড়টি হিমালয়ের উচ্চ পর্বতশ্রেণীতে গিয়ে আরো ঘণীভূত হবে। ফলে, পূর্ব হিমালয় পর্বতমালায় প্রবল ফলে, পূর্ব হিমালয় পর্বতমালায় প্রবল বর্ষণের সৃষ্টি করবে। এতে বলা হয়, উত্তর-পূর্ব ভারত, ভুটান এবং উত্তর বাংলাদেশ জুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং পূর্ব হিমালয় ও গারো-খাসি এলাকায় ভূমিধসের আশংকা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: