কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

৪৮ ইয়াবা কারখানা নিয়ে মাথাব্যথা নেই মিয়ানমারের

মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা তৈরির ৪৮টি কারখানা থাকলেও দেশটির সরকারের তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। এর মধ্যে ৩৭টি কারখানাসহ দেশটির ১২ ইয়াবা কারবারির তালিকা করেছে বাংলাদেশ। দেশটিকে ওই তালিকা দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মিয়ানমার অবশ্য বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে, তারা ওই কারখানার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা বানানোর এসব কারখানার ৪৮টির মধ্যে ৩৭টির নাম ও ঠিকানা লিখিতভাবে মিয়ানমারের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট ডিভিশনকে (ডিইডি) দিয়েছে। জানা গেছে এসব কারখানা থেকে ১৭ ধরনের ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার হয়।

সূত্রটি জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন, মংডু ও শান এলাকায় এসব কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলো মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও মাদক ব্যবসায়ীরা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গ্রুপ কাচিন ডিফেন্স আর্মি (কেডিআই)-এর ১০টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত কুখাই এলাকায় পানসাই খেও মেও ইয়াং মৌলিয়ান গ্রুপের অধীনে সীমান্ত এলাকা নামখামে দুটি, হো স্পেশাল পিলিস জে হোলি ট্রাক্ট গ্রুপের অধীনে কুনলং এলাকায় একটি, মং মিল্লিটা শান স্টেট আর্মির (নর্থ) অধীনে ১ নং বেরিকেড ট্যানগিয়ান এলাকায় একটি, আনজু গ্রুপের একটি, শান ন্যাশনালিটিজ পিপল লিবারেশন (এসএনপিএল) গ্রুপের নামজাং এলাকায় দুটি, একই গ্রুপের মাহাজা ও হোমোং এলাকায় দুটি, ইউনাইটেড ‍উই স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ) গ্রুপের মংটন এলাকায় তিনটি, একই গ্রুপের মংসাত এলাকায় আরও দুটি এবং ত্যাছিলেক এলাকায় তিনটি, মংইয়াং এলাকায় চারটি কারখানা রয়েছে। এ ছাড়াও এই গোষ্ঠীর পাংসাং এলাকায় আরও দুটি কারখানা রয়েছে বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

শান ন্যাশনাল পিপল আর্মির মওখামি এলাকায় দুটি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র‌্যাটিক অ্যালিন্স আর্মির (এমএনডিএ) কোকান এরিয়ায় একটি ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে।

এই কারখানা ছাড়াও যারা বাংলাদেশে নিয়মিত ইয়াবা চালান পাঠায় মিয়ানমারের এমন ১২ মাদক কারবারির নামের তালিকা দিয়ে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ওই ব্যক্তিরা সবাই রোহিঙ্গা এবং তারা মিয়ানমারেই থাকে। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশের মোবাইল সিমও ব্যবহার করে। এরা হলো—মংডুর মংগোলা এলাকার সাফিউর রহমানের ছেলে আলম (৩৭), মংডুর আকিয়াব এলাকার কেফায়েত আলীর ছেলে সাঈদ (৪০), মংডুর গাজুবিল এলাকার মৃত আহম্মেদের ছেলে কালাসোনা (৪০), বাদগাজুবিলিং এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে নূর, মংডুর করীমের ছেলে মহিবুল্লাহ, দইলাপাড়া এলাকার মৃত আমির আহম্মেদের ছেলে আব্দুর রশীদ, গুনাপাড়া এলাকার বাদলের ছেলে হারুন, সুদাপাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আলী জহুর, ফাইজাপাড়া এলাকার মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে সৈয়দ করীম, গুনাপাড়া এলাকার আলী আহম্মেদের ছেলে জায়ার এবং সাফিউর রহমানের ছেলে শাফি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কিছু নাম মিয়ানমারকে দিয়েছি। সেগুলোর বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’

পাচার বেড়েছে ৯৮ শতাংশ

মিয়ানমার থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ মাদক পাচার বেড়েছে বলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে অভিযোগ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেওয়া এক চিঠিতে এই অভিযোগ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ ও ২০১২ সালের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই পাচার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। যা খুবই বিপজ্জনক। নতুন প্রজন্ম এই ইয়াবার প্রধান ভিকটিম বলেও মিয়ানমারকে কঠোরভাবে জানানো হয়।

কাঁচামাল আসে থাইল্যান্ড ও চীন থেকে

মিয়ানমারকে ইয়াবার বিষয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর দেশটি বাংলাদেশকে জানিয়েছে, ইয়াবার কাঁচামাল মিয়ানমারে পাওয়া যায় না। এটি থাইল্যান্ড ও চীন থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে তাদের দেশে প্রবেশ করে।

মিয়ানমারে মাদকাসক্ত তিন লাখ, নিরাময় কেন্দ্র ২৯টি

মিয়ানমার ইয়াবা প্রস্তুত করলেও সে দেশে সরকারি হিসাবে মাদকাসক্তের সংখ্যা মাত্র তিন লাখ। মাদক নিরাময় কেন্দ্র আছে মাত্র ২৯টি। সে তুলনায় বাংলাদেশে মাদকাসক্তর সংখ্যা প্রায় ৩০ গুণ বেশি। ২০১৮ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্ত ৭০ লাখ। যা এখন কোটি ছাড়িয়েছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আশঙ্কা। আর তাদের চিকিৎসার তুলনায় দেশে ৩২৪টির মতো মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন

পাঠকের মতামত: