কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শিক্ষার্থীদের এক হাজার করে টাকা দেব: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেহেতু করোনাভাইরাসে সবার জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের এক হাজার করে টাকা দেব; যেন তারা কাপড়-চোপড়, টিফিন বক্স ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে।
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

করোনাকালে নেয়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ২১টি প্যাকেজে এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। তা জিডিপির চার দশমিক ৩ শতাংশ। এর বাইরেও ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমার বিশেষ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রতিটি মসজিদ-মাদরাসায় টাকা পাঠিয়েছি। সরকারের প্রণোদনার বাইরেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখেই আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। অর্থনীতির চাকাটা যেন গতিশীল থাকে আর মানুষ যেন কষ্ট না পায় তার জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছি। কারণ দেশের মানুষের জন্যই আমাদের এই রাজনীতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা চলমান, এরইমধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তারপর এলো দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। একটার পর একটা আঘাত এসেছে। আমি চেষ্টা করেছি দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়। মানুষ যেন কোনো দুর্ভোগ না পোহায়। আল্লাহর রহমতে সেটা আমরা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টা মানুষের জন্য কাজ, আর সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিপদ দেখে ভয়ে হতাশাগ্রস্ত যেন না হয়ে পড়ি। বিপদ আসবে। সেটা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। সেভাবে সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো মানুষের পাশে আছি। মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল তখন করোনাভাইরাস মোকাবিলা, ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য কাজে যেসব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা ছিল তারা কাজ করেছে। আমাদের কিছুদিন থমকে যেতে হয়েছিল। সবকিছু প্রায় বন্ধ অবস্থায় ছিল। সব কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেও সরকার বসে থাকেনি। যার কারণে আমরা রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। এখানে অবশ্য আরেকটা কারণ আছে সেটা হলো আমাদের খরচ কমেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের বিদেশ যাওয়া নেই, বিভিন্ন অনুষ্ঠান নেই। এসব কারণে আমাদের বেশ সাশ্রয় হয়েছে। সেটা আমরা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারছি। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন রফতানি একটু থমকে গেলেও আমাদের আমদানি-রফতানি এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে গার্মেন্টগুলো যা চেয়েছে আমরা সেভাবে দিয়েছি। আমাদের রফতানি যেন ক্যানসেল না করে, সে কারণে অনেক দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমি নিজেও কথা বলেছি।

তিনি বলেন, আমাদের বড় মেগা প্রজেক্টগুলো থমকে গিয়েছিল সেগুলোর কাজ এখন চলমান। ডিজিটাল করে আমরা সরকারি কার্যক্রমগুলো সক্ষম রাখতে পেরেছি। দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়গণগঞ্জে গ্যাস পাইপ লাইনের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই স্থানে মসজিদ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি ছিল না। ভবিষ্যতে কোনো স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নীতিমালা মেনে করারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় বিস্ফোরণের ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি আরো দুঃখজনক এ জন্য যে, মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এমন একটি জায়গায় যার নিচে ছিলো গ্যাস লাইন। মসজিদ নির্মাণের কোনো অনুমোদন ছিল না, কোনো নীতিমালাও ছিল না। এভাবে অননুমোদিত ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করার ফলে এই দুর্ঘটনা।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যদি কোনো স্থাপনা নির্মাণ করে সেটা নীতিমালা মেনে করতে হবে, যেন আর কোনো দুর্ঘটনা না হয়।

করোনার ভ্যাকসিন আনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক দেশ ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছে। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরাও আবেদন করে রেখেছি। এ জন্য টাকাও বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। যেখান থেকে কম পয়সায় ভ্যাকসিন পাব, সেখান থেকে নেব এবং মানুষকে করোনামুক্ত করবো।

সরকারপ্রধান বলেন, করোনা সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে যখন এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সবাই এটি মোকাবিলায় একযোগে কাজ করছে। প্রশাসন ও আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছি বলেই মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। যতদূর সম্ভব আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। করোনার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ছিল না, তারপরও যে যেভাবে পেরেছি সহায়তা করেছি।

করোনার সময় চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসাসেবা যেন দিতে পারি তার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত, চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়সহ সব ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এ জন্য পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। আমরা টাকা-পয়সার দিকে তাকাইনি। এখানে হয়তো কেউ খুঁজে খুঁজে দুর্নীতি দেখতে পারে। যে মুহূর্তে এ ধরনের একটি দুর্যোগ মোকাবিলার চিন্তা করতে হয়েছিল তখন টাকা-পয়সা কী হবে? কত খরচ হলো, কতটুকু সিস্টেম লস তা বিবেচ্য ছিল না। আমাদের বিবেচ্য ছিল মানুষকে বাঁচানো। কীভাবে মানুষকে রক্ষা করবো সেই ব্যবস্থাটা নেয়ার চিন্তা ছিল। আর সেটা করেছি বলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কি হবে, কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে- সেই সব বিষয়ে আমরা সজাগ ছিলাম। এ জন্য আমরা শুরু থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায় সে জন্য অনেক পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

পাঠকের মতামত: