কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

”ভালবাসা মুক্তি পাক” : আলমগীর মাহমুদ

”ভালবাসা মুক্তি পাক”
আলমগীর মাহমুদ

খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি ঝাঁকের কৈ ঝাঁকে মিশে যাচ্ছি , তালে তাল মেলাতে মিছা হাসির জবাবে মিছা হাসছি ! এক থেকে হাজার জনের কাছে ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ লেখা একই মেসেজের উত্তরে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিচ্ছি, আমি আমার জমানায় বৃদ্ধাঙুলির ব্যবহারে যাহ কওন যাইতো তাই কইছি, রিসিভার এ যুগের বৃদ্ধাঙুলির ‘শুভেচ্ছা -স্বাগতম’ ভাবিয়া সেও মহাখুশী!

জীবন চলার পথে চূঁড়া পর্যন্ত যারা বন্ধুর অর্জনে ছিল সমাজ বাস্তবতার বদলে তারা আজ ছেলে সন্তান, গিন্নি , শ্বাশুড় শ্বাশুড়ি, শ্যালিকার মাঝে আমারে বিলানো ভালবাসাটুকুনও উড্রো করে উৎসর্গ করে দিয়েছে ।

পুরান মা বাবা ঈদ কোরবানিতে চেয়ে রয় কবে আসবে খোকা! একটু বুকে জড়িয়ে পুত্রঘ্রাণ নিবো! পুত্রধন শ্বাশুড়ি মা’র স্বাদ আহলাদ পুরিয়ে বাড়ি আসে ঠিক, তবে সে কাজটি মাছকে ডাঙ্গায় তুলার নাহান! রাত্রিকালীন মেহমানের বেশে! কেউ পাইল কেউ পাইলো না ঢং এ।

দূয়ারে দাঁড়িয়ে জননী নরমসূরে –‘আবার কবে আইয়স ঠিক নাই, আর একটা দিন থাইক্যা যা বাবা! উত্তরে নেই দের…সব তোমারে দিলে আরো মানুষ আছেতো! মা ভান্ডালী মন খারাপ করে চাইয়াই রয়..!

অধিকাংশই অর্ধাঙ্গিনী মা’র ঘরে ফিরতি যাত্রার হয় বিদায়। সে বিদায়েও নুতন মা’র একটা বিদায়ী ভাষণ রয় “খোকা আমার মেয়েটারে আরো একটু নজরে রাইখো! সে কেমন জানি শুকিয়ে যাচ্ছে! যাচ্ছে! খাবারে অনীহা, অনীহা। কিছু খায়ইনা!

ঈদ কোরবানি পহেলা বৈশাখে আত্নীয় স্বজনের বাড়ি মাড়িয়ে বদ্দা, খুইল্যা,দুধুর খবর কয়জনইবা নিই! যদি কখনো যাইও ঘর দোর ঘষামাজা টিনের ছাউনী, ইটের ছোঁয়া লাগাটাতেই গেছি।

পাশের রকিবুদ্দিন কাক্কু চেয়েই রইল।চাচী আস্তে করে কইল এত কইলাম তোমারে, ছউনের ছানীটারে পারলাম না বদলাতে! বইয়নর এক্যান জায়গা তোমারে দিয়া পারলাম না বানাতে! কাক্কুর চেহেরায় কালোমেঘ।
………….–হে-রা শহরে থাকে এই বাড়িতে আইবো!

আগে মা’রে দেখতাম মাংস রান্না হলে পাশের বাড়ির প্রতিবেশীদের পেয়ালা করে পাঠাতো। গরম গোশতের পেয়ালা প্রতিবেশীর বাড়িতে পৌঁছে দিতে বাটিতে কলাপাতার ঢাকনা, নীচে একটা বাসন দেয়া হতো , একবাড়িতে আমারে পাঠালে অন্য বাড়িতে একই কায়দায় ছোটভাই শাহজাহানকে পাঠাতো। মা’শিখিয়ে কইত বাটি নিয়ে আসবি।

তারা বাটি দিতে চাইতো না, আমরা নাছোড় হলে ঘরে শাক,মরিচচুরা,হলুদ পাতা,হলুদ ফুলের চাটনি, বাসী খাইস্যা তরকারি যাহ আছে বাটিতে দিয়ে কইত ”তর মা”রে দিছ”

সেদিনে গ্রামে গঞ্জে আমাদের ভাগ্যে গোশতের দেখা মিলতো কালেভদ্রে! তবে প্রতিবেশীরে দেয়ার পরও খাওনে কখনো কমতি অনুভব করিনি! আমার জান্নাতবাসী মা চাইতো আমরাও যেন এই শিক্ষাধারন করে চলি!

এখন কোরবানীর দিনেও যদি কাউরে কিছু মাংস বাড়িয়ে দেবার কই! দশ কেজি করে মাংসপাবার পরও ঘরে বাইরে এক আওয়াজ “ঘরে চেরাগ দিন জনাব!”

মা’রে! অ..মা সবই আছে আজ, নাই শুধু তোমার শিক্ষা! ত্যাগ! ভালবাসা!

লেখক:
আলমগীর মাহমুদ
বিভাগীয় প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ৷
ই-মেইল: alamgir83cox@gmail.com
মোবাইল নং: ০১৭৪০-৫৪৫০৩৫
উখিয়া-কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত: