কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

দেশে অ্যাভোকাডো চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বিদেশি ফলের চাষে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। অধুনা বিদেশি ফলের প্রথম কাতারেই রয়েছে অ্যাভোকাডো। পেয়ার কিংবা নাশপতি আকারের এই ফলটির ওজন গড়ে ৩০০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দেশে অ্যাভোকাডো চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা

অ্যাভোকাডো ফলের আরেক নাম হচ্ছে ‘মাখন ফল’। এর অভ্যন্তরের বীজটি ফেলে দেওয়ার পরে খাওয়ার উপযুক্ত বাকি অংশটুকো মাখনের মতো নরম। মিষ্টি কম হওয়ায় ডায়েবেটিকস রোগীদের জন্য এই ফলটি দারুন উপকারী। পেঁপের মতো কাঁচা-পাকা ফল, সবজি, ভর্তা, সালাদ, শরবতসহ ভিন্নতরভাবে খাওয়ার সুবিধা আছে। টোস্টে মাখনের পরিবর্তে অ্যাভোকাডো ক্রিম দিয়ে খাওয়া, সালাদে, স্যান্ডুইচে মেয়নেজের পরিবর্তে অ্যাভোকাডোর ক্রিম দিয়ে আহার করা স্বাস্থ্যসম্মত।

অ্যাভোকাডো পুষ্টিতে ভরপুর এবং ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ ফল। এটি দেহকে সোডিয়াম, সুগার ও কোলস্টেরল মুক্ত রাখে। এ ফল অতি ক্যালোরি সমৃদ্ধ, এতে দেহের জন্য উপকারী ফ্যাট যথেষ্ট রয়েছে, হার্টকে সুস্থ রাখে, ক্যান্সার ও কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। চর্বিতে গলে যায় এমন পুষ্টি উপাদন (A, D, K, E) প্রচুর রয়েছে, যা দেহকে সুস্থ রাখতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে।

শিশুদের সুস্থতা ও বৃদ্ধির জন্য অ্যাভোকাডো ফল আহারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ফল মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে সুপরিচিত। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিনস ও মিনারেলস এ ফলে প্রচুর রয়েছে। বিশেষ করে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি এতে বেশি। প্রচুর ভিটামিন সি, বি-৬, রিভোফ্লাভিন ছাড়াও দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ফাইবার সমৃদ্ধ। বয়স্কদের মাসল ও হাড় ক্ষয় রোধে এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সার রোধক হিসেবে এ ফল কাজ করে।

অ্যাভোকাডো আহারে গর্ভবর্তী মায়ের গর্ভপাত রোধ করে, এবং স্বাভাবিক ডেলিভারিতে সহায়ক হয়। মানসিক চাপ, হতাশা দূরীকরণ, ক্ষুধা বৃদ্ধি, সুনিদ্রা নিশ্চিত করা এবং দেহের ক্ষতিকর দ্রব্যাদি প্রস্রাব ও মল আকারে বের হয়ে দেহকে সুস্থ রাখতে এ ফল অতি গুরুত্ব বহন করে।

ট্রপিক্যাল, সাব-ট্রপিক্যাল আওতাধীন দেশগুলোতে এ ফল ভালো হয়। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি, আর্দ্র ও গরম আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে ফুল ফল ধরাকালে বেশি গরম, শুকনা বাতাস ও ফ্রোস্ট সহনশীলতা এ ফলের কম। শীত শেষে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৮০-২৫০ সেন্টিমিটার তাপমাত্রা ফুল ফোটা ও ফল ধরার জন্য বেশি উপযোগী এবং ফল বড় হওয়ার জন্য ২৫০-৩৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে ভালো হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০০-১২০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এলাকায় অ্যাভোকাডো ভালো ফলন দেয়। দেশের পার্বত্য জেলাগুলোসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর উঁচু অংশে এ ফল সম্প্রসারণ সম্ভাবনা খুব বেশি।

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই অ্যাভোকাডো ফলানো যায়। বিশেষ করে পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত লাল মাটি (বরেন্দ্র এলাকা ও মধুপুর গড়) ও এঁটেল মাটিতেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ ফলের লবণাক্ত সহিষ্ণুগুণ তুলনায় কম। চাষের জন্য সয়েল পিএইচ মাত্রা ৫-৭ বেশি উপযোগী। গাছের জলাবদ্ধ সহনশীল ক্ষমতা নেই। এজন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত, পানির স্তর অপেক্ষাকৃত নিচে থাকে, সারা দিন রোদ পায় এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি এ ফল চাষে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হতে হবে।

প্রধানত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পুষ্ট বা পাকা ফল পাওয়া যায়। কচি ফলের রঙ অনেকটা সবুজ থাকে, তবে পুষ্ট হলে বা সংগ্রহ উপযোগী হলে ফলের রঙ পরিবর্তন হয়ে হালকা সবুজ বা কিছুটা ধূসর বা বাদামি রঙ ধারণ করে। এ দেশে ফল পুষ্ট হতে ৫-৬ মাস সময় লাগে, অথচ অন্য দেশগুলোতে অ্যাভোকাডো ফল পাকতে ৮-১০ মাস সময় লাগে। অন্য ফলের ন্যায় গাছে ফল পেকে ঝরে পড়ে না। পুষ্ট ফল পেড়ে ঘরে ৫-৭ দিন রাখলে ফল নরম হয়ে আহার উপযোগী হয়। এ ফল দীর্ঘদিন গাছে রাখার সুবিধা আছে।

পুষ্ট ফল এক দেড় মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। গাছের বয়স ও জাত ভেদে প্রতি গাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০টা ফল পাওয়া যায়। এক থোকায় বা বোঁটায় ১ থেকে ৪টার বেশি ফল ধরে না। কোনো কোনো গাছে অসময়ে ফুল-ফল আসতে দেখা যাায়। সংগৃহীত ফল ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে ১-২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

বাংলাদেশে অ্যাভোকাডো সম্প্রসারণে অতি উপযোগী হওয়ায় পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ফলের উপযোগী জাত চিহ্নিত করে তা বিস্তারে সংশ্লিষ্ট সবার অবদান রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে কৃষিবিদরা মনে করেন।

পাঠকের মতামত: