কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ, পিবিআই পরিদর্শক প্রত্যাহার

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় হত্যা মামলার ঘটনায় ঘুষ লেনদেনের একটি অডিও ক্লিপ ফেসবুক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রত্যাহার হয়েছেন সেই পিবিআই পরিদর্শক ধনরাজ দাস। সেই সঙ্গে ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবেই শাস্তিস্বরূপ তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ১০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে একটি ৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের কথোপকথনের কল রেকর্ড পোস্ট হয়। এরপর থেকে এটি ভাইরাল হয়ে যায়। এ ভাইরাল হওয়া রেকর্ডটি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের একটি হত্যা মামলার ঘটনা এটি।

কেন্দুয়া থানার ওসি কাজি শাহনেওয়াজ জানান, এ মামলায় আসামিপক্ষ নিহতের পরিবারের বিপক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট মামলা করে। পরে মামলাটি তদন্ত করে সত্যতা না পাওয়ায় আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়। সেটির পর তারা আবার নারাজি দিয়ে মামলাটি হয়তো পিবিআইকে দিয়েছে।

ফোনালাপের সূত্র ধরে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ জুলাই কেন্দুয়ার ডাউকি গ্রামের সাবিজ মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া খুন হয়। নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কেন্দুয়া থানায় হত্যা মামলা করলে পুলিশ গত ৪ ডিসেম্বর সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর ছয় দিন পর ১০ ডিসেম্বর ওই মামলার আসামি জিয়াউল ও পলাশের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ তুলে তাদের ভাই জুলহাস মিয়া পরবর্তীতে গত ২০ জানুয়ারি কেন্দুয়া থানায় পাল্টা একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মালামাল লুট ও ভাঙচুর করার কথা উল্লেখ করে আসামি করা হয় খুন হওয়া জুয়েলের মা ললিতা আক্তার, ভগ্নিপতি কিশোরগঞ্জের আবুল হোসাইনসহ ছয়জনকে।

ভাঙচুর ও লুটপাট মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান সাদেকীন গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে মিথ্যা অভিযোগ করায় বাদীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও কার হয়।

কিন্তু ওই প্রতিবেদন বাদীপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে পুনঃতদন্তের আবেদন করায় আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন।

মামলাটির তদন্ত ভার পাওয়া নেত্রকোনার পিবিআই পরিদর্শক ধনরাজ দাস তদন্ত শেষে তিনিও গত ১৩ এপ্রিল আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে মিথ্যা মামলার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে রাতের আঁধারে মালামাল লুট হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি উল্লেখ করেন।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ফোনালাপ থেকে জানা যায়, ওই মামলা তদন্তে গিয়ে বিবাদীদের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন ধনরাজ দাস। তবে ঘুষ নিয়েও তিনি বিবাদীদের পক্ষে প্রতিবেদন না দেওয়ায় টাকা ফেরত চাইছেন ভুক্তভোগী। আর পিবিআই কর্মকর্তা বলছেন, তার অফিসে গেলে তিনি টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। টাকা ফেরত চাওয়া ব্যক্তি তার নাম আবুল হোসাইন পরিচয় দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, পিবিআই কর্মকর্তাকে টাকা দেয়ার সব তথ্য-প্রমাণ তার কাছে আছে।

তবে এ ব্যাপারে পিবিআই পরিদর্শক ধনরাজ দাস ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাকা যাচ্ছেন বলে জানান। এসে কথা কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

পাঠকের মতামত: