কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরে ১২ বছর ধরে গৃহবন্দি রাজনীতিবিদ গিলানি আর নেই

ভারতের কাশ্মীরের প্রবীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানি ইন্তেকাল করেছেন। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
কাশ্মীরে ১২ বছর ধরে গৃহবন্দি রাজনীতিবিদ গিলানি আর নেই

গিলানির মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্বসতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আলজাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জানাজা ও দাফন হয়েছে। এতে তার দুই সন্তানসহ স্বল্পসংখ্যক স্বজন উপস্থিতি ছিলেন।

স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শ্রীনগরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ও অন্যান্য বড় শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ সময়ে কোনো যান চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

কাশ্মীরের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ছিলেন গিলানি। তার পরিবার জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে এই নবতিতম রাজনীতিবিদ অসুস্থ ছিলেন। সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়ার পর গেল এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি গৃহবন্দি ছিলেন।

গিলানির পরিবারের এক সদস্য বলেন, বুধবার তার বুকে ব্যথা দেখা দেয়। মস্তিষ্কেও সমস্যা হয়েছিল। পরে রাতের বেলা শ্রীনগরে তার বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শ্রীনগরের পুলিশ প্রধান বিজয় কুমার বলেন, পূর্বসতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাশ্মীর উপত্যকায় বিভিন্ন বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, শ্রীনগরে তার বাসভবনের দিকে যাওয়া সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভারত ও প্রতিবেশী পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রস্থল কাশ্মীর। দুদেশই এই ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করলেও তারা এর অংশবিশেষ শাসন করছে।

২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে উপত্যকাটি ভারতীয় ইউনিয়নের ভূখণ্ড হিসেবে একীভূত করা হয়েছে। এরপর হিমালয় উপত্যকাটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

গত বছর হুররিয়াত কনফারেন্স থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন গিলানি। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতি থেকে তিনি অবসর নেন। তার দাবি ছিল, বিতর্কিত অঞ্চলটিকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে এই কনফারেন্স বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

১৯৯৩ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল হুররিয়াত কনফারেন্স। ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টার একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এই কনফারেন্স।

গিলানির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই যোদ্ধার মৃত্যুতে জাতি আজ শোক পালন করবে। সারা জীবন তিনি কাশ্মীরের স্বাধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। ভারতীয় আগ্রাসন ও নিপীড়নের মুখেও তিনি অবিচল ছিলেন।

গেল বছর তাকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক নিশান-ই-পাকিস্তান খেতাব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে নেলসন ম্যান্ডেলা, রিচার্ড নিক্সন ও ফিদেল কাস্ট্রোকেও এই পদবি দেওয়া হয়েছিল।

তার মৃত্যুতে পাকিস্তানের ক্রিকেট কিংবদন্তি শহিদ আফ্রিদিও শোক প্রকাশ করে টুইটবার্তা দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: