কক্সবাজার, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

পবিত্র জুমার দিনের বিশেষ আমল

আজ পবিত্র জুমার দিন। দোয়া কবুলিয়তের বিশেষ দিন। এ দিনে এমন এক মুহূর্ত আসে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার দোয়া গ্রহণ করেন।

বিশ্বময় মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সরকারি যে বিধিনিষেধ রয়েছে তা অনুসরণ করে জুমার নামাজ আদায় করছি।

করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই পুরো পরিবার নিয়ে বাড়িতে বাজামাত নামাজ আদায় করছেন। আল্লাহ বান্দার হৃদয় দেখেন এবং আমাদের নিয়ত অনুযায়ী তিনি প্রতিদান দিবেন।

ইসলামে জুমার গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে, কোরআন শরিফের একটি সুরার নামই রাখা হয়েছে সুরা ‘জুমা’। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহতায়ালা জুমাকে কত মহান গুরুত্বই না দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে জুমার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো’ (সুরা জুমা: আয়াত ৯)। ইসলামে জুমার দিনের নামাজের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তা এই আয়াত স্পষ্ট করে।

হাদিসে জুমার নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি, এ চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।’ (আবু দাউদ)

এছাড়া জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আসে যখন বান্দার দোয়া আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বোখারি)

আরেকটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, জুমার দিনে ১২ ঘণ্টা রয়েছে। তাতে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, নাসাঈ)

হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আবু দাউদ)

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে জুমার নামাজ আদায় করতে হবে। এছাড়া আমার যখন মসজিদে যাব তখন পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই যাব।

মসজিদে যাওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে হবে, কেননা খুতবার মাঝে দুই রাকাত নামাজ নিহিত। তাই জুমার খুতবা শোনাও জরুরী। এছাড়া জুমার দিন আল্লাহতায়ালা মুমিনের পুণ্যের প্রতিদান কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। এজন্য জুমার দিন জুমার নামাজ ছাড়াও যথাসম্ভব সকল প্রকার পুণ্য কাজ আমাদেরকে করতে হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে জুমার দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

পাঠকের মতামত: