কক্সবাজার, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

এবার পরীমনিকে নিয়ে কবিতা লিখলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী

মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনি র‌্যাবের হাত আটক হওয়ার পর থেকেই নায়িকার পক্ষে সরব হন বরেণ্য লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। পরীমনির পক্ষে লিখেন একাধিক কলাম, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরীর মুক্তি চেয়ে করেন আবেদনও।

পরীমনির মুক্তি দাবিতে শাহবাগে, প্রেসক্লাবে যখন মানববন্ধন হচ্ছিলো, রাজপথে দাঁড়াচ্ছিলেন মানুষ। তাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেন তিনি। সে মানবন্ধনগুলেোতে পাঠান বার্তা, মুঠোফোনে দেন বক্তব্য।

এবার পরীমনিকে নিয়ে কবিতা লিখলেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য সাময়িকীতে শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে সেই কবিতা। কবিতার শিরোনাম- ‘পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না’।

পাঠকের জন্য কবিতাটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো:

পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

তুমি আমার জন্য কেঁদেছ, শরতের আকাশের

চুপিসারি কান্না,

যা শিশির হয়ে টুপটাপ ঝরে।

আমি রোগশয্যায় শুয়ে শুনেছি সেই রোদন

তুমি কেন আমার জন্য কাঁদলে

আমি টেলিফোনে শুনেছি তোমার সেই কান্না

নায়াগ্রায় দাঁড়িয়ে যে জলপ্রপাতের

শব্দ শুনেছিলাম

তোমার কান্না সেই শব্দের সংগীতকে স্তব্ধ করেছে।

এখানে বড় ঠান্ডা, সেই ঠান্ডায় তোমার কান্না

উষ্ণ জলপ্রপাতের কাজ করেছে

আমার হৃদয়ে।

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেন কাঁদলে

কেন হৃদয় দিয়ে হৃদয় বাঁধলে

ওরা তোমাকে বলে চরিত্রহীনা, আকাশনীলা পাখি

আমি জানি, তুমি শরতের শিশির ধোয়া

শিউলির মতো সুচরিতা।

ছবি দেখেছি, জেল থেকে বেরিয়ে আসছো—

দুই হাত ঊর্ধ্বমুখী জোয়ান অব আর্কের মতো

ওরা তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল

তুমি স্ফিংসের মতো জেগে উঠেছ

দুই ডানায় আগুনের ফুল।

পরীমণি, ওরা তোমাকে দ্রৌপদী বানাতে চেয়েছিল

তুমি হয়ে গেলে দয়মন্তী।

তোমার কান্না আমার মগ্নচৈতন্যকে স্পর্শ করেছে

তোমার চোখের কান্নায় দেখেছি আমার মায়ের—

চোখের জল।

তুমি তেরো নদী সাত সমুদ্র পেরিয়ে

আমাকে সিক্ত করলে মায়ের সেই চোখের জলে।

তোমার কান্না আমার বেদনাকে

ছুঁয়ে গেছে।

তুমি স্কাইলার্কের গান শুনেছ

বিলাতের বসন্তের বাগানে?

সুন্দরী পাখিটির কণ্ঠে কান্নাই গান

তুমি ওই স্কাইলার্কের মতো

আমাকে তোমার কান্না শোনালে

কান্না নয় গান, চোখের জল নয়

হৃদয়ের প্লাবন।

ভারত মহাসাগর পেরিয়েছে

তোমার কান্না, বঙ্গোপসাগরেও

বনানীর জলপাই রঙের বাড়িটা ছেড়ে

চাঁদপুরের পুরোনো বন্দরটা পেরিয়ে

মেঘনার জলকে টেমসের সঙ্গে মিশিয়ে

কার্তিকের চাঁদ হয়ে ঝুলে আছে

আমার রোগশয্যার বারান্দায়।

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

মায়ের মতো ভালোবাসার

দুবাহু বাড়ায়ে দিয়ো না

ভালোবাসা বড় দুর্লভ সৌরভ

সুগন্ধির দোকানে কখনো পাবে না।

পাঠকের মতামত: