কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জেলহত্যা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা

জেলহত্যা দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বুধবার (৩ নভেম্বর) সকালে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জেলহত্যা

এরপর বনানীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় তিন নেতার কবরে শ্রদ্ধা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর পর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। উগ্র সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটন করাই এখনকার চ্যালেঞ্জ। সব গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে এক হয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মূলোৎপাটন করতে হবে।

পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কলঙ্কজনক অধ্যায় ও কালো ছায়ার দিন এটি।

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে এই চার জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

জাতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চার এই জাতীয় নেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করবে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির সাথে সশ্রদ্ধচিত্তে যথাযথ মর্যাদা ও বেদনার সাথে শোকাবহ এ দিবসটিকে স্মরণ ও পালন করবে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জেলহত্যা

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্য উদয়ের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে জাতীয় চার নেতার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে।

দিনের কর্মসূচির শুরুতে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়; উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা।

যেখানে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল, ঢাকার সেই পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। সকালে সেখানে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড:
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতকারী সেনাসমর্থিত চক্রান্তকারীরাই কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছিল। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে বিরল।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্যু-পাল্টা ক্যু’র ধূম্রজালের মধ্যে ৩ নভেম্বর সংঘটিত হয় জেল হত্যাকাণ্ড।

জেলহত্যা

জেলহত্যার পর ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে।

১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর এ মামলায় আসামি সৈয়দ ফারুক রহমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তারপর বিচারিক আদালতে রায় হয়।

তবে শুধু সেনাসদস্য মোসলেউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাই কোর্ট আপিলের রায় দেয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মারফত আলী এবং আবুল হোসেন মৃধাকে খালাস দেওয়া হয়।

নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহাম্মদকেও খালাস দেওয়া হয়।

জাতীয় চার নেতাজাতীয় চার নেতাহত্যাকাণ্ডের সুদীর্ঘ ২৯ বছর পর এর বিচারের রায় হলেও জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা এ রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনের রায়’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের অভিযোগ, জেলহত্যার ষড়যন্ত্রের দায়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়।

২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেরাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে।

কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যামামলায় হাই কোর্টের রায়ে বাদ পড়লেও ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগ দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়।

কাকতালীয়ভাবে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে এই চার নেতা হত্যা মামলার চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ের শুনানি শেষ হয়। ১৯৭১ সালের ওই দিনে এই চার নেতার নেতৃত্বে তৎকালীন কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে শপথ নিয়েছিল স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার।

পাঠকের মতামত: