কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সাগরপথে আবারও মানব পাচার বাড়ছে

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ
আসছে শীত মৌসুমকে সামনে রেখে আবারও সাগরপথে মালয়েশিয়া মানবপাচার আশঙ্কা বাড়ছে। প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে মানব পাচারে জড়িত দালাল সিন্ডিকেট। এসব দালালদের খপ্পরে পড়ে কম টাকার বিনিময়ে বেশী টাকা মুনাফার আশায় বিপদে পা দিচ্ছেন অনেক রোহিঙ্গা। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, এবার রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরাও পাচারের টার্গেট হচ্ছে।
দালালরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সুন্দরী তরুণীদের মালয়েশিয়া অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সাথে বিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ক্যাম্প থেকে নিয়ে আসছে। এছাড়া বিবাহিত রোহিঙ্গা নারীদেরও সন্তানসহ তাদের স্বামীর কাছে পৌঁছে দেয়ার নামে সাগর পথে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে উঠিয়ে দিচ্ছে।
তথ্য সুত্রে দেখা যায়,
গত এগার মাসে টেকনাফ সাগর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া মানবপাচারের চেষ্টাকালে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ৫৮২ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করেছে। এসময় বেশ কয়েকজন দালালকেও আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালালদের চক্রান্তের শিকার হয়ে শতশত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে আসছে। তাদেরকে টেকনাফের বিভিন্ন উপকূলীয় স্থান থেকে ফিশিং ট্রলারে করে সাগরে অবস্থানরত বড় ট্রলারে তুলে দেয়া হয়।
স্থানীয়দের ধারণা, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক মানবপাচার রোধ করতে না পারলে এটি উখিয়া ও টেকনাফে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এব্যাপারে র‌্যাব-১৫ টেকনাফ শাখার দায়িত্বরত সিপিসি-১ এর কম্পানি কমান্ডার লেফট্যানেন্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব (এক্সবিএন) বলেন,সাগরপথে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া গমণ ঠেকাতে উখিয়া টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পাচার কাজে সম্পৃক্ত দালালদের ধরতেও তৎপর রয়েছে র‌্যাব।
এদিকে ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারে মানব পাচার প্রতিরোধ বিষয়ক এক পর্যালোচনা ও কর্মশালা অনুষ্টিত হয়েছে। উক্ত কর্মশালায় বাল্যববিাহ ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারী পুরুষদের রেফারেল সার্ভিস বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইউএসএইড এর সহায়তায় এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশ কাউন্টার ট্রাফিকিং-ইন-পার্সনস (বিসি/টিআইপি) প্রোগ্রাম কতৃর্ক এই কর্মশালার আয়োজন করে।
সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কাউন্টার ট্রাফিকিং-ইন-পার্সন্স (বিসি/টিআইপি) প্রোগ্রাম এর ডাইক্টের এইচ.এম.নজরুল ইসলাম। এসময় কক্সবাজারের প্রেক্ষিত এবং বেফারেল ডাইরেক্টরীর গুরুত্বের উপর আলোচনা কারেন বিসি/টিআইপি প্রোগ্রাম এর কেএম মহসিনুজ্জামান, প্রোগ্রামের প্রসিকিউসন ম্যানেজার মোজাহেদুল উসলাম।
সভায় অংশ গ্রহন করেন, আরআরআরসি অফিসের কর্মকর্তা, জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি’র প্রতিনিধি গনমাধ্যম প্রতিনিধি, আইনজীবী, বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, নারী ও শিশু পাচার এক ধরনের সহিংসতা যা মানব সভ্যতার প্রতি উপহাস, বর্বর যুগের প্রতিচ্ছবি, মানবিক মূল্যবোধ ও অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করার নিদর্শন। বিশ্বজুড়ে মানব পাচার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সব নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব। নারী ও শিশু পাচারের প্রতিরোধের উপায় যেমন খুঁজতে হবে; তেমনি এর প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে মানব পাচার নিয়ে কাজ করছে এই সব সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করছে পাচার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করা সম্ভব বলে মনে করছেন।####

পাঠকের মতামত: