কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ক্রেতা নেই,শত শত লবনের স্তুপ মাঠে

টেকনাফে লবন চাষিদের চোঁখের পানি কে থামাবে?

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ::

লবনের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় টেকনাফের লবন চাষিরা পড়েছে বিপাকে!
কারন চাষিরা লবন উৎপাদন করার সময় যে টাকা খরচ করেছে। লবন বিক্রি করে সেই টাকাটাও আদায় করতে পারবেনা। কারন উৎপাদন খরচের চেয়ে লবনের দাম অনেক কমে গেছে।

এদিকে লবনের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় ক্রেতার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা, তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় টেকনাফের বেশীর ভাগ লবন চাষি ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋন গ্রহন করে লবনের চাষ করেছে। লবনের সঠিক মুল্য না পাওয়ার কারনে কিভাবে তারা ব্যাংকের ঋন শোধ করবে সেই চিন্তায় তারা এখন চোঁখের পানি পেলে পেলে লবনের ন্যার্য মুল্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে লবনের সঠিক মুল্য পাওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে গেছেন মাঠপর্যায়ের লবন চাষিরা।

কিন্তু সেই আশা পুরন তো হয়নি বরং লবণের দাম আগের চেয়ে আরো অনেকটা কমে গেছে। লবন চাষিদের অভিযোগ, প্রতিবছর একটি চক্র পাশ্ববর্তি দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে লবণ আমদানি করার জন্য দেশীয় লবণ শিল্পের বিরুদ্ধে করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্র।

বিসিক সূত্র জানাযায়, বিগত ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে টেকনাফে লবণ উৎপাদন শুরু করে চাষিরা।

এই উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি থেকে লবণ উৎপাদন করা হয়।প তবে গত বছর শুধু টেকনাফ উপজেলা ১ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার টন লবণের চাহিদা পূরণ করেছে। এসময় সরকার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মণ লবণ উৎপাদিতও হয়েছে।

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি লবনের মাঠ গুলো ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফ নাফনদী সংলগ্ন উপকুলীয় এলাকা সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলা ইউনিয়নে ২ হাজার একর জমিতেপড়ে আছে শত শত লবনের স্তুপ। প্রতিটি স্তূপে ৪০-৫০ মণ করে লবণ রয়েছে। এছাড়া টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং ও শামলাপুর ইউনিয়নে আরও দেড় হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে। এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন করা প্রায় ৮শত মণ লবণ মাঠে ভিতরে গর্তে পড়ে আছে।

শুধু সাবরাং ইউনিয়নে লবন মাঠ গুলোতে পড়ে আছে প্রায় ২৫০ হাজার টন লবন।
এব্যাপারে সাবরাং ইউনিয়নের বিশিষ্ট লবন ব্যবসায়ী মোঃ শরীফ হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, লবন মওজুদকারী মিল মালিকরা গত কয়েক বছর ধরে সু-কৌশলে অসহায় ঋনগ্রস্ত লবন চাষিদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এবং সিন্ডিকেট তৈরী করে লবনের দাম কমিয়ে দেয়। সেই সুত্র ধরে এবারও তারা মাঠপর্যায়ে চাষিদের কথা চিন্তা না করে আবারও হঠাৎ করে লবনের দাম কমে দিয়েছে।

এতে ঋনগ্রস্ত লবন চাষিরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কারন তারা লবন উৎপাদন করতে খরচ করেছে সাড়ে ৬ টাকা। বিক্রি করতে গেলে পাবে সাড়ে ৩ টাকা, এক কথায় লবন মুল্য পানির দামের চেয়ে কমে গেছে।

টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন,
অসাধু অর্থলোভী লবন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছে না। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে ঋনের টাকাও পরিশোধ করতে পারবে না অনেকে।

বিসিক টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই সীমান্তে প্রায় ৫০ হাজার মণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় লবণ উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন চাষিরা লবনের সঠিক মুল্য না পেলে আগামীতে লবন উৎপাদন করা বন্ধ করে দেবে।

পাঠকের মতামত: