কক্সবাজার, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুনের আগে মা-মেয়েদের ধর্ষণের আলামত পেয়েছে পুলিশ

গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন সন্তানসহ ইন্দোনেশিয়ার বংশোদ্ভুত এক নারীকে গলা কেটে খুনের আগে মা-মেয়েদের ধর্ষণের আলামত পেয়েছে পুলিশ। খুনের ওই ঘটনায় বৃহষ্পতিবার রাতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেছেন। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর চার খুনের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ।

শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনা বাজার কলেজ রোডের আবদার গ্রামের প্রবাসী কাজল মিয়ার দোতলা বাড়ি থেকে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮) এবং ইন্দোনেশিয়া বংশোদ্ভুত স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা আক্তারের (৪৫) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একজনের লাশ খাটের ওপর এবং বাকিদের লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার লংগাইর ইউনিয়নের গোলবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে কাজল মিয়া বর্তমানে মালয়েশিয়ায় চাকুরি করছেন। প্রায় দেড় যুগ আগে পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনা বাজার কলেজ রোডের আবদার গ্রামের আব্দুল আউয়াল কলেজের পাশে সাড়ে ৫ শতক জমি ক্রয় করেন কাজল ও তার ছোট ভাই জাহিদ হাসান আরিফ। সেখানে কাজল দ্বিতল বাড়ি ও তার ছোট ভাই আরিফ আধাপাকা বাড়ি পাশাপাশি নির্মাণ করেন। শ্রীপুরের এ বাড়ি দু’টিতে ওই দু’ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। মালয়েশিয়ার আগে কাজল ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ১৬ বছর চাকুরি করেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি ওই দেশের নাগরিক স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা আক্তারকে প্রায় ২০ বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কাজল দেশে চলে আসেন।

শ্রীপুর থানার এসআই মো. এখলাস ফরাজী জানান, আলামত দেখে মনে হয় বুধবার রাতের কোন এক সময় পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই কাজলের ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভ’ত স্ত্রী, দুই মেয়ে ও শিশুপুত্রকে ধারালো অস্ত্রে গলা কেটে মার্ডার করা হয়েছে এবং চার জনের দেহেই একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তাদের হত্যার আগে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করার আলামত পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘরের ভেতর থেকে রক্তমাখা একটি বটি দা’ ও চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর সিআইডির ফরেনসিক ও ক্রাইমসিনের ৭ সদস্যের একটি দল হত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত জব্দ এবং মরদেহের সুরতাহাল করেছে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ, পিবিআই ও র‌্যাব কাজ করছে। পুলিশ ক্লু-লেস এ ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, কি কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে তা এখনও উদঘাটন করা যায়নি। তবে ঘরে ডাকাতির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। ঘরের আলমিরাসহ অন্যান্য জিনিস সুরক্ষিত ছিল। এছাড়াও প্রেমঘটিত না-কি অন্য কোন বিষয়ে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটলো তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশের একাধিক টিম।

নিহতের প্রতিবেশী মো. সেলিম উদ্দিন জানান, তাদের সঙ্গে তার সবসময়ই উঠাবসা ছিল। তারা খুব আন্তরিক ছিলেন। ওই এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে প্রায় দেড় যুগ যাবৎ তারা বসবাস করছেন, তাদের কেউ এমন নৃশংসভাবে খুন করবে এলাকায় কারো সঙ্গে এমন কোন সম্পর্ক দেখা যায়নি।

প্রবাসী কাজলের ভাগ্নে মেহেদী হাসান ও কাজলের ভাতিজা নাঈম ইসলাম জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে চার জনের লাশ তাদের নিজ জেলা ময়মনসিংহের পাগলা থানার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।

পাঠকের মতামত: