এশিয়া কাপের গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোরে জায়গা করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের করা ১৮৩ রান ৪ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৮), আফিফ হোসেন (৩৮), সাকিব আল হাসান (২৪), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২৭) ও মোসাদ্দেক হোসেনের (২৪*) ব্যাটে ভর করে ১৮৩ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে বার বার জীবন পাওয়া কুশাল মেন্ডিসের ৬০ ও অধিনায়ক দাসুন শানাকার ৪৫ রানের ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারেই জয় তুলে নেয় লঙ্কানরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ১৮৪/৮ (১৯.২ ওভারে)
ব্যাটিং: আসিথা ১০* ও থিকশানা ০*।
আউট: ৪৫/১ (নিসানকা ২০), ৪৮/২ (আসালঙ্কা ১), ৬৭/৩ (গুনাথিলাকা ১১), ৭৭/৪ (রাজাপাকসে ২), ১৩১/৫ (কুশাল ৬০), ১৩৯/৬ (হাসারাঙ্গা ২), ১৫৮/৭ (শানাকা ৪৫), ১৭১/৮ (চামিকা ১৬)।
বোলিং: এবাদত ৩/৫১, তাসকিন ২/২৪, মোস্তাফিজ ১/৩২, মাহেদী ১/৩০।
বাংলাদেশ: ১৮৩/৭ (২০ ওভারে)
ব্যাটিং: মোসাদ্দেক ২৪* ও তাসকিন ১১*।
আউট: ১৯/১ (সাব্বির ৫), ৫৮/২ (মিরাজ ৩৮), ৬৩/৩ (মুশফিক ৪), ৮৭/৪ (সাকিব ২৪), ১৪৪/৫ (আফিফ ৩৯), ১৪৪/৬ (মাহমুদউল্লাহ ২৭), ১৫৯/৭ (মাহেদী ১)।
বোলিং: আসিথা ১/৫১, হাসারাঙ্গা ২/৪১, চামিকা ২/৩২, থিকসানা ১/২৩, মাদুশঙ্ক ১/২৬।
ফল: শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে জয়ী এবং সুপার ফোরে।
শানাকাকে ফিরিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগালো বাংলাদেশ:
মারমুখী হয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে ফিরিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছে বাংলাদেশ। মাহেদীর করা ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মোসাদ্দেকের হাতে ধরা পড়েন শানাকা। ৩৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে সাকিবের থ্রো-তে রান আউট হন চামিকা করুণারত্নে।
কুশালের বিদায়ের পর ফিরলেন হাসারাঙ্গাও:
মোস্তাফির পর ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। তার করা শর্ট অব লেন্থের বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি হাসারাঙ্গা। বল চলে যায় মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। মাত্র ২ রান করে ফেরেন এই অলরাউন্ডার।
চারবার জীবন পাওয়া কুশালকে ফেরালেন মোস্তাফিজ:
লীয় ৭৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর জুটি বেঁধেছেন কুশাল মেন্ডিস ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা। সতর্ক শুরুর পর তারা দুজন হাত খুলে মারতে শুরু করেছেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ইতোমধ্যে ৩২ বলে ৫১* রান তুলেছেন তারা।
এবাদতের পর শ্রীলঙ্কা শিবিরে তাসকিনের আঘাত:
নবম ওভারের পঞ্চম বলে ভানুকা রাজাপাকসেকে ফেরান তাসকিন। তার শর্ট বলে থার্ডম্যানে বদলি খেলোয়াড় নাঈম শেখের হাতে ধরা পড়েন রাজাপাকসে। চার বল খেলে ২ রান করে যান তিনি।
এবাদতের তৃতীয় শিকার গুনাথিলাকা:
নিজের প্রথম ওভারে দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারেও একটি উইকেট নেন। তার চতুর্থ বল মারতে গিয়ে টপ এজ হয়। তাসকিন আহমেদ ফাইন লেগ থেকে ২০ মিটার দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেন। ৬ বলে ২ চারে ১১ রান করে ফিরেন দানুস্কা গুনাথিলাকা। অবশ্য দ্বিতীয় ওভারের ষষ্ঠ বলে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন যদি রিভিউ নিতো। মুশফিক বল ধরে আবেদন করলেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। আম্পায়ার ওয়াইড দেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল কুশাল মেন্ডিসের গ্লাভস ছুঁয়ে মুশফিকের হাতে গিয়েছিল।
অভিষেকের প্রথম ওভারেই ২ উইকেট নিলেন এবাদত:
ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে পাথুম নিসানকাকে ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী ভাঙেন টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া এবাদত। ওই ওভারের ষষ্ঠ বলে তুলে নেন আরও একটি উইকেট। নতুন ব্যাটসম্যান চারিথ আসালঙ্কাকে শর্ট অব লেন্থের বল দেন। তিনি মিড-অফ দিয়ে মারার চেষ্টা করেন। বল চলে যায় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। তিনি অনায়াসে সেটি তালুবন্দি করেন। ৩ বল খেলে ১ রান করে ফেরেন তিনি।
ভয়ঙ্কার হয়ে ওঠার উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেন এবাদত:
রান তাড়া করতে নেমে ৫ ওভারেই ৪৪ রান তুলে ফেলে শ্রীলঙ্কা। হাত খুলে মারতে শুরু করেন নিসানকা ও কুশাল। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে বল হাতে আসেন এবাদত। তৃতীয় বলেই সাফল্য পেয়ে যান অভিষিক্ত হওয়া এই পেসার। তার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন নিসানকা। ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ বলে ২০ রান করে যান উদ্বোধনী এই ব্যাটসম্যান।
শ্রীলঙ্কাকে ১৮৪ রানের টার্গেট দিলো বাংলাদেশ:
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে ভর করে শ্রীলঙ্কাকে ১৮৪ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের আফিফ ৪ চার ও ২ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন। আর মিরাজ ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলে দুর্দান্ত সূচনা এনে দিয়ে যান। এরপর সাকিবের ২৪, মাহমুদউল্লাহর ২৭ ও শেষদিকে ৯ বলে মোসাদ্দেকের করা ২৪ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ ১৮৩ রানের সংগ্রহ পায়।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৪১ রানে ২টি ও চামিকা করুণারত্নে ৩২ রানে ২টি উইকেট নেন।
৫৭ রানের জুটি গড়ে ফিরলেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ:
দলীয় ৮৭ রানে সাকিব আউট হওয়ার পর জুটি বাঁধেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ। শুরুটা স্লো হলেও সেট হয়ে তারা দুজন মারতে শুরু করেন। তারা দুজন ৩৭ বলে ৫৭ রান তুলে আউট হন। ১৪৪ রানের মাথায় মদুশঙ্কর বলে আফিফ ও ১৪৭ রানে হাসারাঙ্গার বলে আউট হন।
আফিফ-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে লড়াকু সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ:
সেট হয়ে সাকিব ফেরার পর জুটি বাঁধেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ। শুরুটা স্লো হলেও সেট হয়ে তারা দুজন মারতে শুরু করেন। তাতে ১৩ ওভারেই শতরান পেরোয় বাংলাদেশ। তাদের দুজনের ব্যাটে ভর করে লড়াকু সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছে টাইগাররা। এই জুটি ১৬ ওভার শেষে ৩১ বলে ৫১* রান তুলেছে। তাতে বাংলাদেশের রান ১৩৮ পেরিয়েছে।
সেট হয়ে ফিরলেন সাকিব:
সেটা হয়ে হাত খুলে কেবল মারতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাহিশ থিকসানার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। ২২ বলে ৩ চারে ২৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। মিরাজের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ২৪ বলে ৩৯ ও চতুর্থ উইকেটে আফিফের সঙ্গে ১৫ বলে ২৪ রান যোগ করেন দলীয় সংগ্রহে।
মিরাজের পর ফিরলেন মুশফিকও:
মিরাজ আউট হওয়ার ৫ রানের মাথায়ই তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চামিকা করুণারত্নের বল ব্যাকফুটে ডিফেন্ড করতে যান। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে মেন্ডিসের গ্লাভসে গিয়ে জমা হয়। ৫ বল খেলে ৪ রান করে যান তিনি।
ঝড় তুলে ফিরলেন মিরাজ:
মেহেদী হাসান মিরাজ ঝড়ে পাওয়ার প্লে নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। মিরাজের ৩৮ রানের ইনিংসে ভর করে ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৫৫ রান। তবে সপ্তম ওভারেই বিদায় নেন মিরাজ। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলি বলে অ্যাক্রোস দ্য লাইন সুইপ শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। ২৬ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করে যান তিনি। সাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ২৪ বলে ৩৯ রান তোলেন। তার মধ্যে ২৮ রানই ছিল মিরাজের।
আশা জাগানিয়া শুরুর পর ফিরলেন সাব্বির:
টস হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান। প্রথম ওভারেই তারা দুজন ১১ রান তোলেন। কিন্তু দলীয় ১৯ রানের মাথায় অভিষিক্ত আসিথা ফার্নান্দোর করা তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন সাব্বির। আসিথার বলে পুল শট খেলতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। বল তার ব্যাটে চুমু দিয়ে উইকেটরক্ষক কুশাল মেন্ডিসের গ্লাভসবন্দি হয়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ:
এশিয়া কাপে গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতেছেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তিনি বাংলাদেশকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ম্যাচটি শুরু হবে।
বাংলাদেশ দলে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের ম্যাচে খেলা নাঈম শেখ, এনামুল হক বিজয় ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন আজ নেই। তাদের পরিবর্তে দলে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমান ও পেসার এবাদত হোসেন। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা দলে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। মাথিশা পাথিরানার পরিবর্তে একাদশে এসেছেন আসিথা ফার্নান্দো। আজ তার অভিষেক হচ্ছে।
বাংলাদেশের একাদশ:
সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মাহেদী হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও এবাদত হোসেন।
শ্রীলঙ্কার একাদশ:
পাথুম নিসানকা, কুশাল মেন্ডিস, চারিথ আসালঙ্কা, দানুস্কা গুনাথিলাকা, ভানুকা রাজাপাকসে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দাসুন শানাকা, চামিকা করুণারত্নে, মাহিশ থিকসানা, দিলশান মাদুশঙ্কা ও আসিথা ফার্নান্দো।
টস জিতে শানাকা বলেছেন, বড় ম্যাচে রান তাড়া করাটা গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই তিনি ফিল্ডিং নিয়েছেন। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন, টস জিতলে তিনিও ফিল্ডিং নিতেন। তবে এখন যেহেতু ব্যাটিং করবেন সেহেতু উইকেট হাতে রেখে শেষ দশ ওভার কাজে লাগাতে পারলে ভালো একটি ম্যাচ হবে।
এই ম্যাচটি শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। যারা জিতবে তারা চলে যাবে সুপার ফোরে। আর যারা হারবে তারা ধরবে দেশের বিমান।
পাঠকের মতামত: