কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল: যেদিন কেড়ে নিয়েছিলো লাখো মানুষের প্রাণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘হারিকেন’ আঘাত হানার ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলে মধ্যে রাতেএক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বাংলার উপকূল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের ১৯টি জেলার ১০২টি উপজেলা।

তার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫-২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসসহ সেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে তলিয়ে যায়ে সন্দ্বীপ, ভোলা খেপুপাড়া, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাশঁখালী, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া ও টেকনাফ। এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)।

এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নেয় উপকূলের লাখো মানুষের প্রাণ। লণ্ডভণ্ড করে দেয় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পূরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করে প্রকৃতির করুণ এ আঘাত।

সরকারি হিসাবেই ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় সমপরিমাণ মানুষ আহত হয়।প্রায় ১ কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছিল।

কক্সবাজারে কুতুবদিয়া মহেশখালীর লাখো ঘরহারা স্বজনহারা উদ্বাস্তু মানুষেরা পাড়ি জমায় কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দর লাগোয়া এলাকায়, যার নামকরণ করা হয় কুতুবদিয়া পাড়ায়। জীর্ণ কুঠিরের শীর্ণ মানুষের জন্যে এবার স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে। বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করণের আওতায় খুরুস্কুলে প্রায় ২৫৪ একর জমিতে গড়ে তোলা আশ্রয়ন প্রকল্পে এই জলবায়ু উদ্বাস্তু পল্লীর ৪ হাজার ৪০৯ পরিবার পাচ্ছে একটি করে ফ্ল্যাট।ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০ টি ভবনে ৬০০ পরিবার পেয়েছে ফ্ল্যাট।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় অসহায় এসব মানুষেরা পেলো ঠিকানা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিনোদনের পার্ক ইত্যাদি। উপকারভোগীদের অধিকাংশের পেশা ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ এবং উপকূলে বিভিন্ন মহালে কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন। প্রকল্পে আশ্রয় পাওয়া এসব মৎস্যজীবীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং শুঁটকি উৎপাদনের জন্য প্রকল্প এলাকায় তৈরি হবে আধুনিক শুঁটকিপল্লি।

সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। এটি বিশ্বের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্যে প্রথম কোনো আশ্রয়ন প্রকল্প।

উল্লেখ ১৯৯১ সালের ২২ এপ্রিল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ২৪ এপ্রিল নিম্নচাপটি ০২বি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অগ্রসর হওয়ার সময় এটি আরও শক্তিশালী হয়। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং এর গতিবেগ পৌঁছায় ঘণ্টায় ১৬০ মাইলে। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল বেগে আঘাত করে। স্থলভাগে আক্রমণের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ৩০ এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ এর আগে কখনো হয়নি। পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে সেই ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠে বিশ্ব বিবেক।

১৯৯১ সালের সে সময় ক্ষুদ্র অর্থনীতির বাংলাদেশে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল।সেই সময় আমাদের সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিল অপারেশন সি অ্যাঞ্জেলস নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা পৃথিবীর শক্তি।

পাঠকের মতামত: