কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

আনোয়ার হত্যার আসামী সুজন মল্লিকের ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদান

 

কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মেডিপ্লাস পেস্ট কোম্পানীর স্টাফ চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হোসেন (৩৫) হত্যা মামলার আসামী সুজন মল্লিক (২৩) হত্যার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার ২২ মার্চ সুজন মল্লিক কক্সবাজার সদরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দী প্রদান করেন।

কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং মামলার আইও ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

২০২০ সালের ২২ নভেম্বর সাড়ে ৭ টার দিকে মেডিপ্লাস পেস্ট কোম্পানীর স্টাফ আনোয়ার হোসেন তার চাকুরীস্থল টেকনাফ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে হন। পরে একইদিন সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক সংলগ্ন বিএডিসি’র গুদামের দ্বিতীয় গেইটে ছুরিকাহত মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। সেখান থেকে আনোয়ার হোসেনকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে সেখানে আনোয়ার হোসেনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ব্যক্তির করেন।

এ ঘটনায় নিহত আনোয়ার এর ছোট ভাই আতোয়ার হোসাইন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামী উল্লেখ করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পরদিন ২৩ নভেম্বর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার থানা মামলা নং-৬৩/২০২০ ইংরেজি, জিআর নম্বর-৮৬৯/২০২০ ইংরেজী। ধারা-৩০২/৩৪ দন্ডবিধি। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) হিসাবে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আইও ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন এই ক্লুলেস (মামলার এজাহারে কোন আসামীর নাম নাই) মামলাটির ক্লু বের করে আসামী সনাক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মামলার ঘটনাস্থল কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প, মল্লিকপাড়া, সিকদার পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, লার পাড়া, ইসলামাবাদ, সাহিত্যিকা পল্লী, পল্ল্যাইনাকাটা সহ আশপাশ এলাকায় ছদ্মবেশ ধারণ করে গোপনে তদন্ত করতে থাকেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) তার পেশাদারিত্ব ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দীর্ঘ ১৭ মাস পর উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদেরকে সনাক্ত করতে সক্ষম হন। তদন্তকালে আইও ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন এর টার্গেট ছিলো-নির্দোষ ব্যক্তি যাতে হয়রানী না হয় এবং প্রকৃত আসামীরা যাতে আইনের আওতায় আসে।

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, সনাক্ত হওয়া প্রকৃত আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসামী সুজন মল্লিক (২৩) কে গত ২১ মার্চ রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকা হতে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামী সুজন মল্লিক এ ঘটনায় নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততা স্বীকার করে এবং ঘটনায় জড়িত অন্য আসামীর নাম সহ বিস্তারিত তথ্যাদি প্রকাশ করে। একইভাবে আসামী সুজন মল্লিক আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতেও নিজের কৃত অপরাধ সহ সবকিছু অপকটে স্বীকার করে।

সুজন মল্লিক জানায়-ঘটনার দিন সে ও অপর আসামি দু’জনে গাঁজা সেবন করে ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে এবং সেই উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিএডিসি অফিসের সামনের রাস্তার দিকে কোমরে ২ টি ধারালো ছোড়া নিয়ে অগ্রসর হয়। নিহত আনোয়ার হোসেন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে চৌধুরীপাড়ার দিকে হেঁটে বাম হাতে কালো রংয়ের একটি ব্যাগ নিয়ে স্মার্ট ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার পাশ দিয়ে চলছিল। তখন আসামি দু’জনে আনোয়ার হোসেনকে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়-তার মোবাইলটা ছিনিয়ে নিবে। সেই উদ্দেশ্যে আসামি সুজন মল্লিক ও অপর আসামি তাদের হাতে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখায়। মোবাইল ও মানি ব্যাগ নিহত আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে দিতে বলে। তখন আনোয়ার হোসেন ছিনতাইকারীদের বলেন-এটি আমার অফিসের ফোন এবং মানি ব্যাগে ৭০০ টাকা আছে। এটা নিয়ে নিলে বাকি মাসের ৭ দিন আমার বাচ্চা, আমি, আমার স্ত্রী না খেয়ে থাকতে হবে। আমি আর আমার স্ত্রী না খেয়ে থাকলেও কষ্ট নাই। কিন্তু বাচ্চাটা না খেয়ে থাকলে নির্ঘাত মারা যাবে। আনোয়ার হোসেন ছিনতাইকারীদের বলেন-আমাকে একটু দয়া করেন। কিন্তু আসামিরা ভিকটিম আনোয়ার হোসেনের এর কাছ থেকে জোর করে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনাইয়া নেবার চেষ্টা করলে সে বাঁধা দেয়। আসামি সুজন মল্লিক ও অপর আসামি নির্দয় হয়ে ভিকটিম আনোয়ার হোসেন এর শরীরে উপর্যপুরী ছুরিকাঘাত করে। শরীরে ছুরির আঘাতে আনোয়ার হোসেন গুরতর আহত হলেও আসামিরা মোবাইল ও মানিব্যাগ তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। মুমূর্ষু অবস্থায় খালি হাতে কোম্পানির দেওয়া মোবাইল ও মানিব্যাগে রক্ষিত ৭০০ টাকা বাঁচানোর জন্য আসামীদের সাথে লড়ে গেছেন হোসেন। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন আসলে আসামীরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ধৃত আসামী সুজন মল্লিক, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিক পাড়ার বিনতের ঘোনার স্বপন মল্লিকের পুত্র।

মামলার আইও ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ক্লুলেস মামলার আসামী সনাক্ত করা খুবই দুরূহ ও কঠিন কাজ। তারপরও পেশাদারিত্ব, কঠোর পরিশ্রম, তথ্য উদঘাটনে একাগ্রতা, তথ্য প্রযুক্তিও সহকর্মীদের সহায়তায় আসামীকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে পেরেছি। ক্লুলেস মামলায় এটা বিশাল প্রাপ্তি। ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন-এ অর্জন আমার একার নয়। শহর পুলিশ ফাঁড়ির যুক্ত পুরো টিমের প্রতিটি সদস্যের অর্জন। এজন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তিনি শোকরিয়া জ্ঞাপন করে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ মুনীর উল গিয়াস সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন তাঁর ফাঁড়ির যুক্ত টিমকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি জানান, ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: