কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আশানুরূপ পর্যটক নেই কক্সবাজারে, হতাশ ব্যবসায়ীরা

 

কক্সবাজারে ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক আসবেন, এমন আশা করেছিলেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সেভাবে সবকিছু গুছিয়ে অতিথি বরণে প্রস্তুতিও নেওয়া ছিল। পর্যটক আকর্ষণে হোটেল ভাড়ায় ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়ও ঘোষণা করেছিলেন মালিকরা। এরপরও আশানুরূপ পর্যটক না মেলায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, এবারের পর্যটক উপস্থিতি আমাদের চরম হতাশ করেছে। এমন ঈদে লাখো পর্যটকের উপস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হতো। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয়দিনে আমাদের হোটেলে ৬৬টি রুমের মধ্যে মাত্র ২০টি বুকিং রয়েছে। এমন দিনে ২৫-২৮ শতাংশ বুকিং উল্লেখ করার মতো কিছুই নয়। কারণ এখনকার বুকিং ৫০ শতাংশ ছাড়ে দেওয়া। শুধু আমরা নয়, খবর নিয়ে দেখেছি প্রায় প্রতিটি হোটেলেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে।

কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজারে পর্যটক উপস্থিতি খুবই কম। কয়েকটি কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে হয়। ঢাকা বা আশপাশের এলাকার যেসব মানুষ ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে পছন্দ করেন তারা হয়তো এবার পদ্মা সেতু এলাকায় গেছেন। পদ্মা সেতু চালুর আগে ও পরে ব্যাপক প্রচারণার কারণে দর্শনার্থীরা এবার পদ্মা সেতু এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে ঘোরার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এছাড়া সিলেটসহ উত্তরবঙ্গের ২০ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন মানুষ। লাখো মানুষ এখনো বন্যাকবলিত। ঈদ বা অন্য ছুটিতে এসব অঞ্চলের মানুষ সৈকতে ভ্রমণে আসতো বেশি।

তিনি বলেন, আবার ঈদের ছুটির পরই শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী আছে এমন পরিবার ভ্রমণে আগ্রহী নয়। এছাড়া বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগামী; কোরবানির গরুর দাম পড়েছে গতবছরের তুলনায় বেশি। অর্থসংকটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এ কারণে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে হয়তো।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, অতীত সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ধারণা ছিল পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি। কিন্তু অতি সল্পসংখ্যক পর্যটকের দেখা পেয়েছি আমরা। হাজার দশেক যে পর্যটক এসেছেন তাদের মাঝে এক তৃতীয়াংশ স্থানীয়। ঈদের তৃতীয়দিনও তেমন বুকিং নেই বলে জেনেছি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৬০-৬৫ হাজার পর্যটক আসতে পারে বলে ধারণা করছি।

কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত রোজার ঈদের ছুটিতে সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক। তখন পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যবসা হয়েছিল ৫০০-৬০০ কোটি টাকার বেশি। এবার কোরবানির ঈদেও টানা ছুটি থাকায় অন্তত কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করেছিলাম। কিন্তু সে আশার সিকি পরিমাণও পূরণ হয়নি, যা পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্টদের হতাশ করেছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে তারকা হোটেল আছে ডজনাধিক। এগুলোতে হাজার দশেক পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। লাখো পর্যটকের বাকিরা গেস্ট হাউজ ও অন্য হোটেলে থাকেন। সে হিসেবে ভ্রমণে আসা পর্যটকের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সবার অর্থনৈতিক সংকটাবস্থা রয়েছে। তাই ঈদুল আজহার ছুটিতে ৬০-৬৫ হাজারের বেশি পর্যটক পাচ্ছে না কক্সবাজার।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) কক্সবাজারের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ঈদেও পর্যটকের তেমন সাড়া নেই। কক্সবাজারের মতো, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতেও পর্যটক নেই বলে জেনেছি। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটা সৈকত ও সুন্দরবনে পর্যটক সমাগম বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে সেখানেও পর্যটক উপস্থিতি কম, এর মানে মানুষের বেড়ানোর রসদ নেই, সেটাই প্রমাণ করে।

হোটেল সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ঈদে কক্সবাজারে তারকা হোটেলে কক্ষ ভাড়া হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। আর মাঝারি মানের হোটেলে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে।

পাঠকের মতামত: