কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ

মানুষ হলো দেহ ও আত্মার সমন্ময়ে গঠিত অস্তিত্বঃ মৃত্যুর পর যার দেহ বিন্বনষ্ট হয়। কিন্তু আত্মা জীবনপথে অগ্রসর হয়। সে কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত বারযাখের জীবন অতিবাহিত করবে। কোরআন মাজীদ মানব সৃষ্টির বর্ণনা করতে গিয়ে শেষ পর্যায়কে মানুষের দেহে রূহ ফুঁকে দেয়ার পর্যায় বলে উল্লেখ করেছে।
অতপরঃ তাকে অন্য এক অস্তিত্বরূপে সৃষ্টি করেছি।”(সূরা মুমিনুন-১৪)

অপর এক শ্রেনীর আয়াতে মানুষের বারযাখের জীবনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন ঃ “এবং তাদের সম্মুখে (পশ্চাতে) রয়েছে বারযাখ সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। (সূরা মুমিনিন ঃ ১০০)
বারযাখের জীবন সম্পর্কে এরূপ আরো আয়াত রয়েছে।

প্রতিটি মানুষই পবিত্র ও তাওহীদী ফিতরাতের উপর সৃষ্টি হয় যে, যদি এভাবে থাকতে পারে এবং অন্য কোনো বহিঃনিয়ামক তাকে বিচ্যুত না করে তবে সত্য পথকে অতিক্রম করবে। কোনো ব্যক্তিই পাপী, খারাপ বা অসৎ চিন্তার অধিকারী হয়ে মাতৃগর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করে না। বরং অপছন্দীয় বিষয়গুলো উপজাতরূপে বাহ্যিক ও ইচ্ছাধীন নিয়ামকসমূহের ফলশ্র“তি।

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কুৎসিৎ মন-মানসিকতা এরূপ নয় যে, মানুষের প্রত্যয় ও সংকল্পের ছত্রছায়ায়ও অপরিবর্তিত থাকে। অতএব, ‘পাপ চিন্তা আদম সন্তানের সত্তাগত বিষয়’ খ্রিষ্টবাদের এ দাবি ভিত্তিহীন। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে,- ডান-বামে কোনো প্রকার বিচ্যুতি ব্যতিরকে) সে ঐশী দ্বীনের দিকে মুখ ফিরাও যার ভিত্তিতে মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রূম ঃ ৩০)

মহানবী (সা.)বলেন ঃ এমন কেউ জন্মগ্রহণ করেনি যে,পবিত্র ফেতরাতের (তৌহিদ ও একত্ববাদের) উপর জগতে আসেনি। তৌহিদে সাদুকঃ পৃঃ ৩৩১)

মানুষ এক স্বাধীন ও যাচাই মতাসম্পন্ন অস্তিত্ব। অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির মাধ্যমে সে বিভিন্ন কর্মকে বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ ও বর্জন করতে পারে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় ঃ “আমরা তাকে পথ প্রদর্শন করেছি (এখন সে ইচ্ছে করলে) কৃতজ্ঞ হতে পারে কিংবা অস্বীকার করতে পারে।” (ইনসান ঃ৩)

অনুরূপ “বল সত্য তোমাদের প্রভু থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, অতএব যদি কেউ চায় ঈমান আনতে পারে অথবা অস্বীকার করতে পারে। ”(সূরা কাহাফ ঃ ২৯)।”

যেহেতু মানুষ নির্ভেজাল ফিতরাত ও ধী-শক্তির অধিকারী, সেহেতু সে ভালকে মন্দ থেকে পৃথক করতে পারে। অনুরূপ সে স্বাধীন ও নির্বাচন মতার অধিকারী। ফলে সে শিা গ্রহণ করতে পারে। আর উৎকর্ষ ও বিকাশ এবং মহান প্রভুর প্রত্যাবর্তনের পথ সর্বদা তার জন্যে উন্মুক্ত। তবে তা ঐ সময় পর্যন্ত যখন আর তওবাহ গ্রহণযোগ্য নয় (মৃত্যুর সময়)। এ দৃষ্টিকোণ থেকে, নবীগণের (আ.) আহবান সমস্ত মানুষের জন্য উদাত্ত ছিল, এমনকি ফেরাউনের মতো ব্যক্তির জন্যও। যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়। “হে মুসা!ফেরাউনকে বল, ওহে পবিত্র হতে চাও কি? এবং তোমাকে তোমার প্রভুর দিকে পথ নির্দেশনা দেবো, যাতে ভয় কর।” (সূরা নাযিয়াত ঃ ১৮-১৯)

পাঠকের মতামত: