কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন

মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া বার্তা::
উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর নতুন করে নির্মাণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে রোহিঙ্গারা।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) সাহায্যে বাঁশ, কাঠ, তাঁবু ও ত্রিপল দিয়ে কোনো রকম বাসযোগ্য বসতি নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এনজিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের খাবার, পানি, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
৮ নম্বর ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ঘর নির্মাণের জন্য রোহিঙ্গাদের বাঁশ দিচ্ছে অক্সফাম নামে একটি এনজিও। তারা প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে ঘর তৈরির জন্য এক বান্ডেল করে বাঁশ দিচ্ছে।
অক্সফামের স্বেচ্ছাসেবক রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা খাবারের বিশুদ্ধ পানি দিচ্ছি। পাশাপাশি ঘর তৈরির জন্য বাঁশ দিয়েছি।
তারপর ৯ নম্বর ক্যাম্পে ঘর তৈরির জন্য রোহিঙ্গাদের ত্রিপল ও পলিথিন দিচ্ছেন জাতিসঙ্গের অভিবাসন সংস্থা আইওএম স্বেচ্ছাসেবকরা। একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘আমরা ঘরসদৃশ ত্রিপল দিচ্ছি। শুধু খুঁটি গেড়ে এসব ত্রিপল দিয়ে ঘর তৈরি সম্ভব। পাশাপাশি আমরা পলিথিনও সরবরাহ করছি।’
৮ নম্বর ক্যাম্পের ই-ব্লকে পোড়া ঘরটি মেরামত করছিলেন রোহিঙ্গা যুবক কলিম উল্লাহ। তাকে সাহায্য করছিলেন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। কলিম উল্লাহ বলেন, ‘বার্মাত্তুন কিছু জিনিসপাতি আনিত পাইজ্জি। কিন্তু ক্যাম্পর আগুনুত্তন কিছু বাঁচাইত ন পারি। বেগ্গিন (সব) জ্বলি গেইয়ি। এহন বেয়াগ নতুন গরি কিনন পরিবু।’
১০ ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর জাহান বেগম বলেন, ‘বেগ্গিন জ্বলি পুড়ি শেষ অই গেইয়ি। আরার আর কিছু নাই। তবু আরাত্তে বাঁচন পরিবু।’
গত বুধবার পুড়ে যাওয়া স্থান পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় তিনি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
এর আগে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ্ রেজওয়ান হায়াত সাংবাদিকদের জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রোহিঙ্গাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা নিজ নিজ বসতিতে ফেরা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে ফেরত আনা হবে।
গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রায় সাত ঘন্টার আগুনে ১১ জনের মৃত্যুসহ ৯ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি, ১৩৬টি লার্নিং সেন্টার, দুটি বড় হাসপাতাল ও মূল্যবান জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও মসজিদ, দোকানপাট ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার ভবন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ পালিয়ে আশ্রয় নেয় আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও দুই লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। এর মধ্যে উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা আছে প্রায় ৯ লাখ।

পাঠকের মতামত: