কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পল্লী বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং

উখিয়ার সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর বোরো জমি হুমকির মুখে

উখিয়া বার্তা ডেস্ক::
কৃষি নির্ভরশীল উখিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর
জমিতে বোরো চাষাবাদের আশাতীত উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকরা সময়মত চারা রোপন করতে পারছে না। পানির অভাবে বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন সম্ভব না হওয়ায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষক জমি চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে পারেনি।
এহেন পরিস্থিতিতে বোরো আবাদ নিয়ে শংকায় দিন কাটাচ্ছে ২১ হাজার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৪৬০ হেক্টর
জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উক্ত জমিতে বোরো চাষাবাদের জন্য কৃষকেরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ না
পাওয়ার কারণে এখনো পর্যন্ত প্রায় হাজারেরও অধিক এসব জমিতে চারা রোপন করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকেরা জানান, সময়মত জমিতে সেচ, পানি সরবরাহ করতে না পারলে লক্ষ্যমাত্রা, ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না।
ডেইলপাড়া গ্রামের কৃষক হোছন আলী জানান, সে পল্লী বিদ্যুতের নির্ধারিত
ফিস পরিশোধ করার পরও প্রায় ২ মাস যাবত তার সেচ মিটারের সংযোগ দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় প্রায় ২৫ একর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই কৃষকের সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিদের্শ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান। এভাবে একাধিক কৃষক সেচ সংযোগের অভাবে বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন পূর্বক জমিতে সেচ ও চারা রোপন করতে পারছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।
টাইপালং গ্রামের কৃষক শামশুল আলম জানান, যথাসময়ে চারা রোপন সম্ভব হলেও সেচ সরবরাহ নিয়ে আতংকে আছেন। সে জানায়, প্রতি বছর পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে তারা চাষাবাদে পানি নিষ্কাশন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হয়েছে। এমতাবস্থায়ও ভাল ফলন উৎপাদন হওয়ায় এবারও তারা নির্ধারিত জমি জমার বাইরেও চাষাবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
সরেজমিন রাজাপালং ইউনিয়নের হাজীরপাড়া, দোছরী, হরিণমারা ও হারাশিয়া এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিন রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ মেলেনা। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পানি উত্তোলনতো দূরের কথা অচল হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ সেচ পাম্প।
হরিণমারা গ্রামের শামশুল আলম, আলী আকবর, মুফিজ মিয়া সহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে জানান, বিদ্যুতের অভাবে তারা এখনো পর্যন্ত জমি চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে পারেনি। বীজতলায় পানি না থাকায় চারা গুলো মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
হাজীর পাড়া গ্রামের কৃষক শামশু হাজী জানান, পানি শূণ্যতার কারণে অধিকাংশ জমি প্রয়োজনীয় পরিচর্যার মাধ্যমে চাষাবাদের উপযোগী করে তুলা হলেও চারা উত্তোলন সম্ভব না হওয়ায় জমিতে বোরো চারা রোপন করা যাচ্ছে না। এভাবে শত শত কৃষক পল্লী বিদ্যুতের অকল্পনীয় লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম গোলাম সরওয়ার মোরর্শেদ জানান, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে যাতে পানি সরবরাহের জন্য কৃষকের দূভোর্গ পোহাতে না হয় সে ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, তারা কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ করে বোরো আবাদে নিশ্চিদ্র বিদ্যুৎ
সরবরাহ রাখার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে শরণার্থী ক্যাম্পে যে ভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে তাতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিদ্যুৎ থাকলেও নলকূপে পানি পাওয়া না পাওয়ার উপর নির্ভর করছে চাষাবাদের ফলন উৎপাদন নিশ্চিত করা।
উপজেলা কৃষি অফিসার প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, এ পর্যন্ত ২শতাধিক সেচ সংযোগের আবেদন করা হয়েছে। এর আগেও সেচ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
আবেদনকৃত সংযোগ গুলো যথাসময়ে দেওয়া হলে কৃষকদের দূভোর্গ পোহাতে হবে না। তিনি বলেন, উপজেলায় ৩০ হাজার চাষী বোরো চাষাবাদের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে দুই তৃতীয়াংশ জমিতে চারা রোপন সম্ভব হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও বোরো ভাল উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পাঠকের মতামত: