কক্সবাজার, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

উখিয়ায় ২৩ কোটি টাকার খাল সংস্কারে দূর্নীতি, কাজ শেষ না করেই বিল পরিশোধ

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া::

দূর্নীতি ও চুরির কারণে সংস্কারের কয়মাস না পেরোতেই ভেঙে তছনছ হয়ে পড়েছে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ১১ কিঃমিঃ খাল। সংস্কার কাজ চলাকালে খালপাড়ের অসংখ্য গাছপালা উজাড় করা হয়। সংস্কার কাজের শর্তানুযায়ী সবুজায়নের উদ্দেশ্য কয়েক লক্ষ গাছের চারা রোপন না করার পরও ঠিকাদারকে চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণেও উখিয়া এলজিইডি ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মিলে কাজ না করেই লুঠে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

উখিয়া উপজেলা এলজিইডি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্প অভ্যন্তরে বয়ে চলা ১১ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ২ টি খাল সংস্কারের দরপত্র গৃহীত হয়। কুতুপালং মধুরছড়া হতে জুমেরছড়া হয়ে বালুখালী ব্রিজ পর্যন্ত এবং ২০ নং ক্যাম্প হতে বালুখালী খেলার মাঠের পাশের ব্রিজ পর্যন্ত ১১ কিঃমিঃ খাল সংস্কারে ২৩ কোটি টাকার দরপত্র গৃহীত হয়।

সংস্কার কাজে দীর্ঘ ১১ কিঃমিঃ খালের বিদ্যমান তলদেশ হতে ১ মিটার বা সাড়ে ৩ ফুটের মত খনন করা,ভাঙ্গনরোধে খালের দুই পাড় আরসিসি ব্লক বসানো ও সংস্কারকৃত খালের দুই পাড়ে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্য ঔষধি ও দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপনসহ পরিচর্যা করন কাজ বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্ত এলাকাবাসী এডিবির অর্থায়নে গৃহীত উক্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকাংশে সিডিউলে বর্ণিত নির্ধারিত গভীরতায় না কেটে দায়সারাভাবে লোক দেখানো খাল কাটা হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে খালের তীরের দুইপাশে কম পুরুত্বের, নিম্নমানের ব্লক বা স্ল্যাব বসানো হয়েছে। যা সংস্কারের ৫/ ৬ মাসের মাথায় গত বর্ষার শুরুতে অধিকাংশ স্হানে ভেঙে পড়ে পাকা স্ল্যাব বা ব্লকগুলো।

সম্প্রতি উখিয়া এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী নিজে রোহিঙ্গা লেবার দিয়ে ভাঙন স্হানে বালির বস্তা দিয়ে মেরামতের অপচেষ্টা করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। খাল সংস্কারের সময় এলজিইডিকে অনিয়মের অভিযোগ করলেও উক্ত প্রকৌশলী কোন ব্যবস্হা নেননি বলে জানান স্হানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ সোনা আলীসহ এলাকার অনেকে।

এব্যাপারে উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম খাল সংস্কার কাজে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। খালপাড়ে বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যা করন সংস্কার কাজের অংশ হলেও তিনি প্রায় ৪ লক্ষ গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা না করেই কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল পরিশোধ করেছেন। তবে তিনি বলেন, গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা বাবদ টাকা বিল থেকে কেটে রাখা হয়েছে।

এদিকে ইএমসিআরপি প্রকল্পের ডব্লিউ১৪ নং প্যাকেজের “২ নাম্বার প্রকল্প ১৩ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প তাজনিমারখোলা ফুটবল খেলার মাঠ হতে ২০ নাম্বার ক্যাম্প পর্যন্ত ২ কিঃমিঃ এইচবিবি” দ্বারা সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদারকে প্রায় ৭০ শতাংশ বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে।

উক্ত সড়কে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আর্মি কর্তৃক নির্মিত কাটাতারের বেড়া থাকায় ১ কিঃমিঃ কাজ করার পর আর করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ২৪/৫/২০২১ ইং ৫০৩ নং স্মারক মূলে এলজিইডির কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দিয়ে জানান উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম। এ ব্যাপারে এলজিইডির উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কাজ না করে অতিরিক্ত বিল পরিশোধের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উক্ত কাজ চলমান রয়েছে। কাজ করতে না পারার চিটির কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

২০১৭ সালে ব্যাপক আকারে মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। এদের আশ্রয়ের কারণে প্রাকৃতিক,জীব বৈচিত্র্যসহ জলবায়ুর ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে উখিয়া উপজেলা। স্হানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর চাপে সরকার জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে ক্ষতি মোকাবিলায় উদ্যেগ নিতে প্রস্তাব দেয়।

তৎপ্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক – এডিবি স্হানীয় ভাবে এলাকার আর্থ সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রায় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। এসব প্রকল্পের আওতায় সুপেয় পানির সুব্যবস্হা করণ, স্কুল – কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগের সংস্কার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন খাল সংস্কার ও ক্যাম্পের আভ্যন্তরীন সড়ক উন্নয়ন প্রভৃতি।

পাঠকের মতামত: