কক্সবাজার, রোববার, ৫ মে ২০২৪

কক্সবাজারের পরিবেশ ভালো নেই

কক্সবাজার পর্যটন নগরী হিসেবে দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। এখানে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলমান রয়েছে। কিন্তু সুস্থ নেই কক্সবাজার। হুমকির মুখে রয়েছে এই পর্যটন নগরীর পরিবেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কক্সবাজারের পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ করতে হবে। দ্বীপাঞ্চলগুলোর পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্যও রক্ষা করতে হবে।’ কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার বদলে চলছে ধ্বংস। পাহাড় কর্তন, নদী দূষণ ও দখল এখানে প্রতিযোগিতার মতো।

এ শহরে অবস্থিত সদর মডেল থানা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার উত্তরে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকা। সেখানে গেলে দেখা যাবে নদী ভরাট করে কীভাবে বসতবাড়ি স্থাপন করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অবৈধ দখল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু চোখে পড়ছে না প্রশাসনের।

বাঁকখালী নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে কক্সবাজার-খুরুশকুল যাতায়াতের ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু। কিন্তু সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে নদী ও তীরের প্যারাবন দখল। প্রকাশ্য দিবালোকে প্যারাবনের গাছপালা নিধন, পরে ট্রাক করে বালু ফেলে নদী ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে সংযোগ সড়কের পাশে প্রায় ৬০০ হেক্টর এলাকার প্যারাবন উজাড় করে তৈরি হচ্ছে শতাধিক ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের দায়সারা জবাবে সচেতন মহল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন প্রশাসন চাইলে একদিনে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু কেন করছে না সেটা আজও অজানা।

বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট একসময় কক্সবাজার-চট্টগ্রামে জাহাজ চলাচলের রুট ছিল। এই শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল কস্তুরাঘাট। এই ঘাট থেকে উত্তরে অবস্থিত ইউনিয়ন খুরুশকুল পর্যন্ত নদীর প্রস্থ ছিল দেড় কিলোমিটার। এই দেড় কিলোমিটারজুড়েই পানির প্রবাহ ছিল। দখল, দূষণ এবং ভরাটের কারণে এখন নদীতে পানির প্রবাহ আছে কোথাও ৪০০ মিটার, কোথাও ২০০ মিটার।

বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন সূত্র মতে, বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় গত কয়েক মাসে প্রায় ৬০০ এর বেশি হেক্টর এলাকায় নদী দখল ও ভরাট করে ৪০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছ কেটে শতাধিক টিনের ঘর ও পাকা ভবন তৈরি হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ২০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া নদীর অন্যান্য এলাকায়ও দখল ও ভরাটের কারণে নদীর গতিপথ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দখল ও ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অনেক উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর ছাড়াও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের প্রচেষ্টায় বাঁকখালী নদী দূষণ ও দখলবাজদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব। আমাদের অভিযানও চলমান রয়েছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, কক্সবাজার বাঁকখালী নদী কক্সবাজারের প্রাণ। বাঁকখালী নদীতে পাওয়া যেত নানা প্রজাতির মাছ। এখন তা নেই দুষণের কারণে। বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট ছিল কক্সবাজারের সাথে সারাদেশের যোগাযোগের ও ব্যবসা বাণিজ্যের ঘাট। এখন এই ঐতিহ্যবাহি নদী দুষণের কারণে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। দখলের কারণে নদীর অধিকাংশ দখল হয়ে গেছে। কস্তুরাঘাট দখল করে অর্ধশতাধিক স্থাপনা হয়েছে।’

বাঁকখালী হচ্ছে কক্সবাজার জেলার প্রধান নদী। এই নদীর উপর বিভিন্নভাবে অন্তত ৭-৯ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। তাই সাধারণ জনগণের স্বার্থে যে কোনোভাবে এই নদীটি রক্ষা করা প্রয়োজন। সচেতন মহলের দাবি প্রতিনিয়ত নদীর বুকে সৃষ্ট প্যারাবন ও জলাভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

পাঠকের মতামত: