কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: ৫৭ কিলোমিটার সড়কে ৩১ বিপজ্জনক বাঁক

কক্সবাজার শহর থেকে চকরিয়ার দূরত্ব প্রায় ৫৭ কিলোমিটার। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই ৫৭ কিলোমিটার অংশে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে ৩১টি।

বাঁকগুলোয় নেই দিকচিহ্ন–সংবলিত সাইনবোর্ড কিংবা ফলক। এই মহাসড়কের দুই পাশে রয়েছে ঘন জঙ্গল। এতে দূর থেকে বাঁকগুলো চোখে পড়ে না।

এখানেই শেষ নয়। অনুমোদন না থাকলেও এই মহাসড়কে চলাচল করে অনেক ফিটনেসবিহীন যান ও মহাসড়কে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। অনিয়ন্ত্রিত এমন যান চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

গত বৃহস্পতিবার সকালে মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ৫৭ কিলোমিটারের এ সড়কে চকরিয়ার গয়ালমারা, আজিজনগর বাজার, হারবাং বাজার, হারবাং ইনানী রিসোর্ট, বানিয়ারছড়া, নলবিলা, ফাঁসিয়াখালী ভেন্ডী বাজারসহ অন্তত ৩১টি স্থানে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতে দিকচিহ্ন–সংবলিত ফলক চোখে পড়েনি। সড়কে চলছে নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি, ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক।

বিপজ্জনক বাঁকগুলোয় আগে সাইন ছিল। কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে।

কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা
এসব যান নিয়ন্ত্রণে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। লবণবোঝাই ট্রাক চলাচলের সময় সড়কের ওপর ঝড়ে পড়ছে পানি—এমন দৃশ্যও দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে এস আলম পরিবহনের একটি বাসের চালক মোস্তফা কামাল (৪৫) বলেন, এতে সড়ক পিচ্ছিল হচ্ছে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুতগতির যানগুলোর দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

তবে দিকচিহ্ন–সংবলিত ফলক প্রসঙ্গে সড়ক বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, বিপজ্জনক বাঁকগুলোয় আগে সাইন ছিল। কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে।

এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত পাঁচটি কারণকে দায়ী করছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থা।

কারণগুলো হলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোয় দিকচিহ্ন–সংবলিত ফলক না থাকা, সড়কে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ও অবৈধ যানের বেপরোয়া চলাচল, সড়কের ওপর ও পাশে অবৈধ হাটবাজার। এ ছাড়া সড়কে বাঁকগুলোয় বড়বড় খাদ ও দুই পাশে মালামাল স্তূপ করে রাখায় সড়ক সংকুচিত হওয়াকেও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।

৮ ফেব্রুয়ারি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত দুর্ঘটনাটি ঘটে এই মহাসড়কে। মহাসড়কের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় মারা যান স্থানীয় হাসিনাপাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র সুশীলের পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীল।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ৩০টির বেশি অবৈধ হাটবাজার গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ও ট্রাকস্টেশনও।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সড়কের বিপজ্জনক বাঁকগুলো চিহ্নিত করে দিকচিহ্ন–সংবলিত ফলক লাগানো, অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ, অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ
৮ ফেব্রুয়ারি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত দুর্ঘটনাটি ঘটে এই মহাসড়কে। মহাসড়কের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় মারা যান স্থানীয় হাসিনাপাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র সুশীলের পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীল।

পুলিশ ও নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ মাস ৮ দিনে এই মহাসড়কের পাঁচটি অংশের বিপজ্জনক বাঁকে ২০টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৫ জন। ২০২১ সালে ২৩৫টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫২ জন, আহত ৫৪০ জন। ২০২০ সালে ২২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৯ জন। আহত হয়েছেন ৫৫৮ জন। প্রথম আলো

পাঠকের মতামত: