কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কথিত’ আরসা নেতা হাসিমের মরদেহ উদ্ধার

কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ‘কথিত’ নেতা মোহাম্মদ হাসিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুবুর রহমান।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলের উদ্দেশে পুলিশ রওনা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিহত হাসিম টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনছিপ্রাংয়ের ২২নং ক্যাম্পের মৃত নুরুল আমিনের ছেলে। তিনি কথিত আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। অবশ্য প্রশাসন আরসার কোনো অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই বলে দাবি করে আসছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, আরসার নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন হাসিম। তিনি সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড ও মাদরাসায় হামলা চালিয়ে সাতজন হত্যার অন্যতম হুকুমদাতা। ক্যাম্পে অঘোষিত নিয়ন্ত্রণযজ্ঞ চালান হাসিম। এমনকি যারা তার সঙ্গে চলেন তাদের ওপরও বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাতেন তিনি।

সূত্রটি আরও জানায়, এসব ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। হয়তো গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্যাম্পেও প্রশাসনের লোক আছে। প্রয়োজনে ফাঁড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধারে যাবে পুলিশ।

কারা এই আরসা

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি, সংক্ষেপে আরসা। এক বিবৃতিতে আরসা জানায়, তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। তাদের আত্মরক্ষামূলক হামলার মূল টার্গেট হচ্ছে মিয়ানমারের ‘নিপীড়নকারী শাসকগোষ্ঠী’। তারা এটাও বলছে যে, অধিকার আদায়ের জন্য তারা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়।

আসলেই কি তারা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়? মধ্যপ্রাচ্যের কাতারভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, আরসার আগের নাম ‘হারকাহ আল ইয়াকিন’ বা ‘ন্যায়ের যুদ্ধ’। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে রাখাইনের তিনটি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আরসা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হন। মাত্র কয়েক ডজন লোক ছুরি আর লাঠি নিয়ে ক্যাম্পে অতর্কিতে হামলা চালায় এবং কর্মকর্তাদের হত্যার পর হালকা অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

অক্টোবরের শেষে আরসার প্রধান নেতা আতাউল্লাহ আবু আমার জুনুনি ১৮ মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় ওই হামলাকে সমর্থন জানিয়ে এজন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতায় উসকানিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘৭৫ বছর ধরে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়েছে। এ কারণেই ৯ অক্টোবর আমরা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছি।’

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব এক্সস্ট্রিমিজম-এর গবেষক মং জার্নির মতে, আরসা হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘ধারাবাহিক নির্যাতন আর গণহত্যার অনুপাতে’ জন্ম নেওয়া একটি সংগঠন। তিনি বলেন, ‘একদল আশাহীন মানুষ, যারা নিজেদের ও সম্প্রদায়ের লোকজনের মুক্তির জন্য বা রক্ষার জন্য যেকোনো ধরনের আত্মরক্ষার জন্য একটি গ্রুপে সংগঠিত হয়েছে।’

কী চায় আরসা

আরসার দাবি, তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের মূলনীতি ‘রক্ষা করা, উদ্ধার করা ও প্রতিরোধ গড়া’। আরসা নিজেকে কোনো ধরনের ‘সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর তকমা’ থেকে দূরে রাখার দাবি করে।

মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডেও কি আরসা

অভিযোগ উঠেছে, মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মতো সাত খুনেও মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা (আল ইয়াকিন নামেও পরিচিত) জড়িত। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ার শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য নতুন করে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার এ রোহিঙ্গা নেতার হত্যাকাণ্ডের মাস না পেরোতেই গত শুক্রবার উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে খুন করা হয় ছয় রোহিঙ্গাকে। মুহিবুল্লাহ খুনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করাসহ আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা জোরদারের দাবির মুখে ছয় খুনের ঘটনা ঘটল।

এসব ঘটনায় রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্য রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।সুত্র: ঢাকাপোষ্ট

পাঠকের মতামত: