কক্সবাজার, রোববার, ৫ মে ২০২৪

নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা অভিযোগে ভোটার তালিকা থেকে বাদ, চলছে শুনানি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা অভিযোগে ভোটার তালিকা থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শনিবার (৪ মার্চ) সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে সকালে এ শুনানি শুরু হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডেরই ৪২২ জন রোহিঙ্গা ভোটারতালিকায় আছে অভিযোগ করে, তাদের বাদ দিতে ২০২১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনে আলাদা আবেদন করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজ আহমেদ।

ভোটারতালিকা থেকে বাদ দেয়ার আবেদনের পর উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে না পারায় ৭৭ জনের নাম তালিকা থেকে স্থগিত করা হয়েছে প্রথম দফায়। পরবর্তীতে তারা জেলাপ্রশাসকের কাছে আবেদন করেন যে তারা প্রকৃত বাংলাদেশি, ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ শুনানি কমিটির প্রধান হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা। সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরমান ভূঁইয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোমেন শর্মা সময় সংবাদকে বলেন, ভোটার তালিকা থেকে ৭৭ জনের বাদ পড়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজকে পুনঃশুনানি চলছে। নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ এলাকায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য যে সকল মানদন্ড নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। কোনো প্রকৃত বাংলাদেশি যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে আবার কোন রোহিঙ্গা যেন জাল কাগজপত্র দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে; সে ব্যাপারে বিশেষ কমিটি সতর্কতার সাথে কাজ করবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যাচাইবাছাই কমিটির সদস্য নুরুল আবছার সময় সংবাদকে বলেন, আমার পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান যেসব রোহিঙ্গাদের ভোটার করে গেছেন, তাদেরই সন্তানরা সেই সুযোগে ভোটার হচ্ছেন। তাদের বাবা-মাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না দেয়ায় রোহিঙ্গা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র থাকায় তাদের নাগরিক সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছি। এ সুযোগে প্রকৃত রোগিঙ্গা হয়েও তাদের সন্তানরা বাংলাদেশের নাগরিক হচ্ছেন।

এ সময়ে কথা হয় অভিযোগকারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাঙালি হয়েও শুধু রোহিঙ্গরাদের ভোটার হওয়ার বিরোধিতা করার কারণে আমরা কোণঠাসা। ২০২১ সালে শুধু আমার ওয়ার্ড থেকে ৪২২ জন রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে নির্বাচন কমিশন, ঢাকা অফিস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। সেই তালিকা থেকে যাচাইবাছাই করে প্রথম পর্যায়ে ৭৭ জন রোহিঙ্গাকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন বাকি রোহিঙ্গাদের বাদ না দিয়ে উল্টো ওই ৭৭জনকে তালিকাভুক্তির ষড়যন্ত্র চলছে। আজ সেই ৭৭ জনকে তালিকাভুক্তির শুনানি হচ্ছে। জানি না, এই শুনানির মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে কিনা।

বান্দরবান জেলা নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, আমাদের উপজেলা বিশেষ কমিটি আছেন, তারাই শুনানি করছেন। তারা রোহিঙ্গা কিনা; সেই সত্যমিথ্যা বের করছেন স্থানীয় মেম্বর-চেয়ারম্যানরা।

নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার হিড়িক পড়ছে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এখন মোটামুটি ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজার ও বান্দরবানে একটা ঝুঁকি আছে। তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। আমাদের কাছে এতটুকুই তথ্য আছে। তবে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। সর্বশেষ ভোটার হালনাগাদে আমরা কড়া ছিলাম। কিন্তু তাদের (যাদের নাম ভোটারতালিকায় স্থগিত হয়েছে) দাবি, আমাদের বাবা-মা ভোটার ছিলেন, আমাদের কেন নাগরিকত্ব দেয়া হবে না। জেলা আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে তারা আবেদন করেছেন। তারা বলছে, আমরা স্থানীয় নাগরিক, আমাদের রোহিঙ্গা বলে বাদ দেয়া হচ্ছে। বাদ দেয়া মানে স্থগিত রেখেছে। তাদের বিষয়ে আজ শুনানি হচ্ছে। সূত্র সময়টিভি

পাঠকের মতামত: