কক্সবাজার, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব শুরু

নদীতে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসাবি উৎসব’ আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে। এই বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ের পাড়ায় মহল্লায় উৎসব মুখর পরিবেশ। চলছে প্রাচীন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লটারির আয়োজন। বৈসাবির পাশাপাশি বাঙালির পহেলা বৈশাখ এবং সনাতন ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপনের আনন্দেও ভাসছে পাহাড়ের মানুষ। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে বৈসাবি নামে এ উৎসবটি পালন করলেও পাহাড়ের অন্যান্য পাহাড়ি সম্প্রদায় ভিন্ন ভিন্ন নামে এ উৎসব পালন করে আসছে।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারি বৈসু। হারি বৈসুর প্রথম প্রহরে ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীরা সংগ্রহ করেছে নানা ধরনের বনফুল। সংগৃহীত ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বসত বাড়িসহ প্রতিষ্ঠান। বৈসাবির দ্বিতীয় দিন ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করে বৈসুমা। দিনের শুরুতে দেয়া হয় গঙ্গাপূজা। বৈসাবির শেষ দিন ত্রিপুরা পালন করে বিসিকাতাল নামে। এদিন নানান আনুষ্ঠানিকতায় পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে পাড়ায় পাড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গরিয়া নৃত্য।

মারমা সম্প্রদায় তিন দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব পালন করে সাংগ্রাই, আক্যেই ও আতাদা নামে। আজ সাংগ্রাইয়ের প্রথম প্রহরে মারমারা বাড়িঘর পরিষ্কার করার পর বৌদ্ধ মন্দিরে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এবং পঞ্চশীল প্রার্থনার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবের সূচনা করবেন। এরপর শোভাযাত্রা, প্রাচীন খেলাধুলাসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবেন তারা। বৈসাবির দ্বিতীয় দিন মারমারা পালন করেন আক্যেই নামে। বৈসাবির শেষ দিন মারমারা পালন করেন আতাদা নামে। দিনটি মারমাদের অতিথি পরায়ণের দিন।

চাকমা সম্প্রদায় মূলত ফুল বিজু, মূল বিজু ও গজ্যেপজ্যে বিজু নামে তিন দিনব্যাপী এই উৎসবটি পালন করে থাকে। আজ চাকমা সম্প্রদায়ের ফুল বিজু। ফুল বিজুর দিন চাকমা সম্প্রদায়ের কিশোর-কিশোরীরা ফুল দিয়ে ঘর সাজায় এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে নদীতে ফুল ভাসাতে যায়। ১৩ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিজু। মূল বিজুর দিন নানা প্রকার সবজির সংমিশ্রণে ঘরে ঘরে রান্না করা হয় মজাদার পাচন। ১৪ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের গজ্যেপজ্যে বিজু। এই দিন পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরন করে নেয়া হয়। দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে করা হয় বিশেষ প্রার্থনা। করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর উৎসবটি পালন করতে না পারলেও এবছর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈসাবিকে ঘিরে পাহাড়ের অন্যান্য এলাকার ন্যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চলছে নানা আয়োজন।

পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী এই সামাজিক উৎসব বৈসাবি মূলত বাংলা পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার জন্যই পালন করা হয়ে থাকে। তাই প্রতি বছর এই সময়ে পাহাড়ের ১০ ভাষাভাষী ১৩ টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী এই সামাজিক উৎসবের অনাবিল আনন্দে মেতে উঠে পাহাড়ে বসবাসরত অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষও।

বাঘাইছড়িমুখ চাকমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিচালক আনন্দ মোহন চাকমা জানান, এবছর বৈসাবিকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেসব আয়োজন চলছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কারন প্রতিটি আয়োজনেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাচীন সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

উপজেলা বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ত্রিদিপ দেওয়ান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইনজেব চাকমা জানান, এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাব না থাকায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু (বৈসাবি) উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: