কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশেও পড়তে পারে ইউক্রেন পরিস্থিতির প্রভাব

 

ইউক্রেন-রাশিয়ার বর্তমান সংকটের শিকড় অনেক গভীরে এবং তা অবশ্যই ইউক্রেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম দিনেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ বাংলাদেশেও ইউক্রেন পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

বাংলাদেশে গত নভেম্বরে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহণ ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তার ধাক্কা সামলাতে নাগরিকরা হিমসিম খাচ্ছেন৷ ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা আছে৷

বিশ্ব বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১০২. ৩২ ডলারে উঠেছে৷ বুধবার ছিল ৯৯ ডলার৷ আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও স্বর্ণের দামও বাড়ছে৷ তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী৷

তবে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলে মনে করেন সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷ তার মতে, ‘‘এতে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কিছু ব্যবসায়ী যে-কোনো অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো জন্য বসে থাকেন৷ তেলের দাম বাড়ানো হলে সেটাকে ইস্যু করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা৷ গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর কী পরিস্থিতি হয়েছিল, আমরা তা দেখেছি৷’’

তার মতে, ‘‘সরকারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনে ঋণ করতে হবে৷ সরকার এডিবি, বিশ্বব্যাংক, অথবা সৌদি আরব, কাতার থেকে দ্বিপক্ষীয় ঋণ নিতে পারে৷ এর আগেও সরকার নিয়েছে৷’’

আর গ্যাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র এলএনজি আমদানি করি৷ সেটার দাম বাড়ানোও ঠিক হবে না। সরকার এখন সেবাখাতে তার পাওনা টাকা আদায় করেও তা দিয়ে ভর্তুকি দিতে পারে৷’’

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানি করে থাকে রাশিয়া থেকে। তা ছাড়া এখন তৈরি পোশাক শিল্পের নতুন বাজার হিসাবেও বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি। আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য, যার বেশিরভাগটাই খাদ্য পণ্য।

এর আগের বছর রাশিয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানি করেছিল ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য, অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৭৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য।

বিশেষ করে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টার ২০ শতাংশ আসে এই দুটি দেশ থেকে। আবার তৈরি পোশাক রপ্তানির নতুন বাজার হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকেও।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রভাব এর মধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তাদের ব্যবসার ওপর।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান গম আমদানিকারক, সিটি গ্রুপের একজন পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে প্রতিবছর আট থেকে দশ লাখ টন গম আমদানি হয়। সেটা বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যান্য যে মালামাল রাশিয়া থেকে আমরা এনে থাকি, এই পরিস্থিতিতে জাহাজগুলোতে সেই মালামাল তোলা যাবে কিনা জানি না।”

অপরদিকে যুদ্ধের কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলো এখন কৃষ্ণসাগরে যেতে চাইছে না। ফলে দেশের রপ্তানিকারকরাও চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই তার সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর মতো বড় প্রকল্পের কাজ চলছে রাশিয়ার সহায়তায়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে এর কারণে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে৷ এর প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের ওপরেও পড়বে৷’’

তবে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার আওতা আরও বাড়লে বাংলাদেশ কী করবে, বাংলাদেশকে সেই আগাম পরিকল্পনা নিয়ে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।

পাঠকের মতামত: