কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র: মজুত হবে ২৫ বছরের ছাই, থাকছে ২৭৫ মিটারের চিমনি

সায়েদ আলমগীর::

এক হাজার ৬০৫ একর জমির ওপর দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে ‘মাতারবাড়ি ২×৬০০ আল্ট্রাসুপার কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন পোড়ানো হবে ১৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন কয়লা।

কয়লা পোড়ানোর ফলে বর্জ্য হিসেবে বছরে আট লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ছাই বের হবে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার মেট্রিক টন ছাই হবে বিদ্যুৎ প্রকল্পটিতে।

বিশাল পরিমাণের এ ছাই যেন পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য নেয়া হয়েছে অত্যাধুনিক পদ্ধতি। বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতরে ছাই মজুত করার জন্য রাখা হয়েছে ২৫৫ হেক্টর জমি। যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছরে যে পরিমাণ ছাই উৎপাদন হবে তা মজুত করে রাখা যাবে।

পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে মজুত করা এ ছাই রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে সিমেন্ট কারখানায়। ফলে বর্জ্য হিসেবে বের হলেও এ ছাই ফেলনা হবে না। বরং ছাই থেকে তৈরি হবে সিমেন্ট।

এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পোড়ানো কয়লা থেকে যে ধোঁয়া বের হবে সেটাও যেন পরিবেশের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য তৈরি করা হচ্ছে ২৭৫ মিটার উঁচু বিশাল চিমনি। এ চিমনির ভেতর দিয়ে কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া অনেক ওপর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যে স্থানে চিমনি স্থাপন করা হবে, সেখানে অগভীর কূপ খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে লোহার রড পুঁতে চিমনি বসানোর স্থানটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এখনো চিমনির কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়নি।

প্রকল্পের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৭৫ মিটারের যে চিমনি তৈরি করা হচ্ছে, তা হবে অত্যাধুনিক। বাংলাদেশের আর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে এতো বড় চিমনি তৈরি করা হয়নি। পরিবেশবান্ধব সব ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করে এই চিমনি তৈরি করা হবে।

তিনি বলেন, অত্যাধুনিক এই চিমনি তৈরি করতে কী ধরনের ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা হবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। কোন দেশ থেকে চিমনির ইকুইপমেন্ট আনা হবে তাও নির্ধারণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বৈঠক করে শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে যে স্থানটিতে কয়লার ছাই রাখা হবে, সেখানে ঘুরে দেখা গেছে— ছাই মজুতের জন্য কূপ খনন করা হয়েছে। সেই কূপে পানির মধ্যে ছাই মজুত রাখা হবে।

প্রকল্পের দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো প্রকল্প এলাকার মধ্যে ছাই মজুতের স্থানটিতে কোনো বিদেশি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে না। এখানে ছাই ভিজিয়ে পানির নিচে রাখা হবে। বাইরে ছড়িয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে কয়লা পোড়ানো হবে, তাতে বছরে ৮ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ছাই হবে। সিমেন্ট তৈরির জন্য এই ছাই বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানা কিনে নেবে। আমাদের হিসাবে পাঁচ বছরের ছাই মজুতের ব্যবস্থা রাখলেই যথেষ্ট। তারপরও ২৫ বছরের ছাই মজুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মাতারবাড়ি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে কোনো প্রকল্পে ছাই মজুত রাখার পদ্ধতি ছিল না। আমরা ২৫ বছরের ছাই মজুত রাখার ব্যবস্থা করেছি। এখানে ২৫ বছরের ছাই মজুত হবে না। কারণ বাংলাদেশে অনেক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি আছে। বাংলাদেশে আসলে কোনো ছাই থাকে না, হওয়ার আগেই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো কিনে নিয়ে যায়। আমাদের ধারণা, এখানে ২৫ বছর কেন এক বছরের ছাইও থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, তবু আমরা ২৫ বছরের ছাই মজুত রাখার ব্যবস্থা রাখছি। এটা অন্য কাজেও ব্যবহার করব, সেটা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা ওই জায়গায় সোলার প্যানেল সিস্টেম করব। সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসাব। যখন আমাদের দরকার হবে, তখন এটা সরিয়ে আবার ছাই রাখব। মনে হয় না সেটার প্রয়োজন হবে।

পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চিমনি করা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকল্পে যা কিছু ব্যবহার হচ্ছে তার সবই অত্যাধুনিক। চিমনির ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে এটা জানা যাবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে মোট খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি তিন লাখ টাকা। বাকি সাত হাজার ৪৫ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল। প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই বিদ্যুতের প্রকল্পে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট এবং জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড সমাপ্তির লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে।

পাঠকের মতামত: