কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান: জাতিসংঘের ‘নিন্দা প্রস্তাবে বাধা’ চীনের

মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’সহ দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও শাসক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আটকের মধ্য দিয়ে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরপত্তা পরিষদ। তবে নিন্দা প্রস্তাব এনে নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া সেই যৌথ বিবৃতিতে বাধা দিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের সমর্থন না থাকায় যৌথ বিবৃতিটি আটকে গেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌথ বিবৃতি দিতে স্থায়ী সদস্য ও ভেটো দেয়ার ক্ষমতা থাকা চীনে সমর্থন দরকার ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ সেই সমর্থন না পাওয়ায় বিবৃতিটি বাধার মুখে পড়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সেনা অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে নেতৃবৃন্দকে আটকের তীব্র নিন্দা জানান।

নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মহাসচিব (গুতেরেস) মিয়ানমারে নতুন পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রাক্কালে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট, উইন মিন্ট ও অন্যান্য শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।’

‘মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে এসব পদক্ষেপ বড় ধরনের বাধা’ বলেও গুতেরেসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন দুজারিক।

গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক শীর্ষ নেতাকে আটক করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই সেনাপ্রধান মিং অং হ্লইংসহ অন্য কর্মকর্তারা দেশটির মন্ত্রিসভার ওপর ক্ষমতা দিয়ে একটি সুপ্রিম কাউন্সিল গঠন করেন।

তাৎক্ষণিকভাবে সু চি সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে সেনাবাহিনী। সেসব পদে ১১ জন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। যাদের বেশিরভাগই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা। বাকিরা সেনাসমর্থিত দল ইউএসডিপির সদস্য। আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিজ হাতে রাখেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লইং।

গেল নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন নিয়ে এনএলডি ও দেশটির সামরিক বাহিনীর মধ্যে বৈরিতা চরম রূপ ধারণ করে। এনএলডি সরকার গঠনের মতো আসন পেলেও ভোটে ব্যাপক কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনী। এরই জেরে দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সু চি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লইং। একইসঙ্গে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির হাতে যথারীতি ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আগে মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শ্রেনাও সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি সুস্পষ্ট যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে সু চি’র দল বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে।’

নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা প্রস্তাবে বাধা দিয়ে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই সেনা অভ্যুত্থানকে ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে দাবি করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ইলিয়ট প্রাসে-ফ্রিম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ‘এ ধরনের বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে চীন তার কৌশলগত অবস্থানের বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছে। চীন এমনভাবে এটি দেখাচ্ছে যে, এটি মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ ইস্যু’।’

এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টিকে ‘মন্ত্রিসভায় রদবদল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তবে চীনের বাধার মুখে পড়া জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবটি তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনও পার্থক্য তৈরি করতে পারতো না বলে মনে করেন মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ইলিয়ট। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের সেই বিবৃতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজে লাগতো বলেও মনে করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: