কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা সংকট শান্তি ও ন্যায়বিচারে বাধা

শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান অর্জনে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। শুধু বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই এটি দুশ্চিন্তার নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির জন্যও ভাবনার বিষয়। এসডিজি গোল-১৬-এর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট : বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’-এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

জিইডি গত জুনে প্রতিবেদনটি তৈরি করলেও প্রকাশ করা হয়েছে সম্প্রতি। এতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৬ নম্বর গোল- শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান অর্জন। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা গেলে এসডিজি অর্জনে সম্পদের ওপর চাপ কমবে। আর তার জন্য প্রয়োজন সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘দুনিয়াজুড়ে সহিংসতা দমনে অগ্রগতি, আইনের শাসনের প্রসার, প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ এবং সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের প্রাপ্যতা এখনো সমতাভিত্তিক হয়নি। এখনো কয়েক মিলিয়ন মানুষ নিরাপত্তা অধিকার ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সেবা এবং বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে অবহেলা করা হচ্ছে। সহিংসতার ভিন্ন রূপ তথা যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং অপরাধ প্রবণতা উন্নয়নের গতি টেনে ধরছে। এ জন্য এসডিজি-১৬ অর্জনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- নারীরা শারীরিক, মানসিক ও যৌন সহিংসতার বেশি শিকার হচ্ছে দরিদ্র পরিবারে। এ জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা, আরও জোরালো প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা ও আইন প্রয়োগের দরকার। তা ছাড়া মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দৃঢ় করা জরুরি। কেননা শান্তি, মানবাধিকার, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া টেকসই উন্নয়নের কথা চিন্তা করা অসম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার বিধ্বংসী প্রভাব রয়েছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি এ থেকে সৃষ্ট দুর্দশা কয়েক প্রজন্ম ধরে স্থায়ী হয়। যৌন সহিংসতা, অপরাধ, শোষণ ও নির্যাতন ঘটছে অহরহ। তবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে রক্ষায় কাজ করছে বাংলাদেশ। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রসার ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ মজবুত করাও জরুরি।

এসডিজি-১৬ অর্জনে আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এটি তৈরি করতে কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়ের প্রাপ্ত তথ্য নিয়মিত হালনগাদ না করায় উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ এবং সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণ, অর্থায়ন কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খোঁজ করাও কঠিন হয়ে যায়। এ ছাড়া সংস্থাগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত সমন্বয় না থাকায় বাজেট বরাদ্দ ও এসডিজি সম্পর্কিত কার্যক্রমের মূল্যায়নে অনেক অনৈক্য দেখা দেয়।

এদিকে জিইডি এর আগে প্রকাশিত ২০১৮ সালের এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়ন কৌশলে এসডিজি-১৬ অর্জনে বাড়তি বিনিয়োগের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধরা হয় ১০৮ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৭৮ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ২৩৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। এ বাড়তি খরচের ৮০ শতাংশ সরকারি উৎস এবং ২০ শতাংশ বাইরের উৎস থেকে আসার কথা। ২০২০ সালে জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা এসডিজি অর্থায়ন কৌশলের প্রাক্কলিত ব্যয়ের মাত্র ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। কাজেই অর্থায়ন ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে আরও সহযোগিতা বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এসডিজি-১৬ অর্জনে কার্যকর বিচারব্যবস্থায় জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাও মৌলিক চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনা, বিশেষ করে পারিবারিক সহিংসতা এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে অভিযোগ করা দেশে বড় একটি বিষয়। আসলে সহিংসতা রোধ, ঝুঁঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের রক্ষা, ভিকটিমকে সহায়তা দেওয়া এবং হামলাকারীকে আরও আইনানুগ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে সময়মতো অবহিত করা প্রয়োজন।

পাঠকের মতামত: