কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিকলবন্দি জীবন উখিয়ার মোজাম্মেলের

মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া বার্তা::
কক্সবাজারের উখিয়ায় ৪ বছর ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে মোজাম্মেল হকের। বৃদ্ধা মা-বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটান। তাই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা। মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি কোনো সহযোগিতা।
উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ফলিয়াপাড়া গ্রামের জাফর আলমের বড় ছেলে৷ ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কৃষি কাজ করে জোটাতেন নিজের লেখাপড়ার খরচ। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শান্তশিষ্ট ছেলে হিসেবে গ্রামের সবাই তাকে আদর করতো। কিন্তু হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। ৮ বছর ধরে মানসিক সমস্যা দেখা দিলেও পায়ে শিকল পড়েছে ৪ বছর ধরে।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের এক ভাঙাচোরা ছাপড়া ঘরের বাহিরে একটি গাছের সাথে পায়ে লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মোজাম্মেল হককে। রোদ বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের দিনে এখানেই বসবাস তার। ডাকলে সাড়া দেন মোজাম্মেল হক। তবে কথার উত্তর দিতে চান না। বাড়িতে কেউ গেলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন এবং মারধর করেন৷
গাছের সঙ্গেই লাগানো আরেকটি ঘরে মোজাম্মেল হকের মা-বাবা বসবাস করেন। টিনের এই ঘরটিও জরাজীর্ণ। দরজা জানালা নেই। তাই পুরাতন কাপড়ের টুকরা সেলাই করে বানানো হয়েছে ঘরের দরজা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে মোজাম্মেল হক সবার বড়। বাবা দিনমজুর। অভাবের সংসার। পরিবার নিয়ে তাদেরই জীবন চলে কষ্টে। তাইতো মোজাম্মেল হক উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তার বৃদ্ধা মা নুরু জাহান অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন।
স্থানীয় কামাল বলেন, সম্পদ বলতে ভিটে-মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। কেউ যদি আমার ছেলের চিকিৎসায় এগিয়ে আসতেন, তবে হয়তো সে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো।
স্থানীয় বাসিন্দা আমানুল্লাহসহ কয়েকজন জানান, অতি দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে মোজাম্মেল হকের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। তাই যদি কোনো সুহৃদয়বান ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় তাহলে পরিবারটির খুবই উপকার হতো।
মোজাম্মেল হকের বাবা জাফর আলম বলেন, আমার ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো। গ্রামের সবাই তাকে ভালো জানতো। ছেলে আমার সাথে কৃষি কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোটাতো। কিন্তু হঠাৎ করেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। কী কারণে এমনটা হলো তা বলতো পারবো না। রাস্তার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো। বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে বসে থাকতো। লোকজন ভয় পেতো। লোকজন দেখলে ঢিল ছুড়ে মারতো। অনেক সময় মানুষজনও তাকে ধরে মারপিট করতো। এ কারণে বাধ্য হয়েই পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার আরও উপযুক্ত দুই মেয়ে আছে। তাদের পড়ালেখা খরচ বহন করতে বেশি কষ্ট হয়ে যায়৷ আমি কি মোজাম্মেলর চিকিৎসার খরচ বহন করব নাকি তাদের খরচ বহন করব কিছুই বুঝছি না।
এর আগে কক্সবাজার মানসিক চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল মাহমুদ হোসেন জানান, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: