কক্সবাজার, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

সাগর পাড়ি দিতে মরিয়া রোহিঙ্গারা, কিছু জানে না নিরাপত্তা বাহিনী

সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে অন্যান্য দেশে যাওয়ার কথা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বললেও কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী বলছে যে, তাদের কাছে এ ধরণের কোন তথ্য নেই।

গত ৮ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয় যে, থাইল্যান্ডের ফুকেট এলাকার নিকটবর্তী অঞ্চলে আন্দামান সাগরে দুশো’র বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে একটি নৌকা ভাসছে।

নৌকায় থাকা এই শরণার্থীরা বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে এসেছে বলে রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়।

তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক বিশ্বাস বলেন, “না, আমাদের কাছে এরকম কোন তথ্য নাই।”

“আমরা যদি তথ্য পাই তাহলে আমরা একটা ব্যবস্থা নেবো,” বলেন তিনি।

এদিকে সোমবারও ৫৮ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি কাঠের নৌকা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে। তবে এটি সেই ভাসমান নৌকাটিই কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কক্সবাজার পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে চলে যেতে না পারে তার জন্য জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, কোস্টগার্ড ও বিজিবির সমন্বিত ভাবে কাজ করে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বে থাকা ১৪এপিবিএন এর কমান্ডিং অফিসার সৈয়দ হারুনুর রশীদ বলেন, ক্যাম্পের ভেতর মানব পাচারে রোধে তারা নানা ব্যবস্থা নিলেও দালালচক্রের সক্রিয়তার কারণে তাদের বাগে আনা যায় না।

‘স্বপ্ন নেই’

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ সরকারের রিফিউজি রিলিফ এন্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের সাগরযাত্রা বিষয়ে কোন কিছু তাদের নজরে আসেনি।

তবে তার মতে, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া কিংবা অন্য কোন ভবিষ্যতে সম্ভাবনা তারা দেখছে না বিধায়, সচেতন করেও তাদেরকে ঝুঁকি নেয়া থেকে ফেরানো যায় না।

মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সাগর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি না নেয় তার জন্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন তারা।

এর আওতায় রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডারদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তারা।

“অতীতে যে অনেকেই নিখোঁজ বা মারা গিয়েছে সেগুলো বলি।”

“সমস্যাটা হচ্ছে তাদের কোন দেশ নাই। তাদের কোন স্বপ্ন নাই। তারা একটা স্টেটলেস, মোস্ট পারসিকিউটেড জাতিতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তারা তো সাগরে ডুবে মরাটাকেও কিছু মনে করছে না,” বলেন মি. রহমান।

তার মতে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ছয় বছর হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোন উন্নতি হয়নি। যার কারণে মিয়ানমারে তারা ফেরত যেতে পারবে এমন কোন স্বপ্ন দেখতে পারছে না।

ফলে এধরণের ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-কেন্দ্রিক কাজ করে থাকেন তারা। সেখানে কোন রোহিঙ্গার এরকম মানবপাচারের সাথে জড়িত থাকা বা কোন ধরণের অভিযোগ পেলে তা আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয় বলে জানান।

পরে তাদেরকে জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মি. রহমান বলেন, “মানবপাচার তো সারা বিশ্বেই একই রকম। দালাল চক্রের মাধ্যমেই যায় এরা। এদের তো আত্মীয় স্বজন যারা মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশগুলোতে আছে। এদের একটা চক্র কাজ করে এখানে।”

তবে এর আগে পুলিশ অনেক মানবপাচারকারীকে আটক করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাগরে নৌযাত্রা তদারক করে থাকে কোস্টগার্ড। তবে রোহিঙ্গাবাহী নৌকার সাগর পাড়ি দেয়া বিষয়ে কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাড়ছে সাগর যাত্রা

শরনার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তজার্তিক সংস্থাগুলো বলছে যে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর সাগর পাড়ি দেয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে।

বিবিসি থাইকে রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী সাইদ আলম কয়েক দিন আগে জানান, গত কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে অন্তত চারটি নৌকা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দিকে গেছে যাতে অন্তত ৮০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিলেন। সূত্র বিবিসি নিউজ বাংলা

পাঠকের মতামত: