কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সিনহা হত্যার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ১৫ নভেম্বর

তারেকুর রহমান::

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার ষষ্ঠ দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ১৫, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের শুরুতে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সিনহা মামলার ৯ জন আসামি তার আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার আগে সব আসামিকে তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। তারপর তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই ধরনের সাক্ষ্য দেন আরেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জোর করে নেওয়া হয়েছে।’

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘জেরা করার সময় আসামিদের জোর করে জবানবন্দি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, যারা জবানবন্দি দিয়েছে তারা স্বেচ্ছায় দিয়েছেন।’

ওসি প্রদীপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘এই মামলার ১২ জন আসামিকেই চাপে ফেলে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে গিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছেন। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। তাই তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে আসামি ওসি প্রদীপকেও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাপ দিয়ছিলেন। কিন্তু ওসি প্রদীপ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। কারণ, তিনি সিনহা হত্যা মামলায় জড়িত ছিলেন না।’

আদালতের কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, মামলার পরবর্তী স্বাক্ষগ্রহণের তারিখ আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর।

তিনি জানান, বুধবার (২৬ অক্টোবর) সিনহা হত্যা মামলায় স্বাক্ষীর তালিকায় ছিল কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এই দুজন বিচারক সিনহা হত্যা মামলার ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জন আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

তিনি আরও জানান, আদালতে দুজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের আরও চারজন সদস্যকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সময়ের অভাবে তাদের স্বাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী ধার্য দিনে তাদের স্বাক্ষগ্রহণ করা হবে। এই মামলায় এ পর্যন্ত ৫৯ জন স্বাক্ষী দিয়েছেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় ওসি প্রদীপসহ এই মামলার ১৫ জন আসামিকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।

এ মামলায় এক থেকে ষষ্ঠ ধাপের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ৫৭ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। শেষ দিন ৫৮তম সাক্ষী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

পাঠকের মতামত: