কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা

বাতাসে বহিছে প্রেম.. নয়নে লাগিলো নেশা.. কারা যে ডাকিলো পিছে.. বসন্ত এসে গেছে..। শীতের হাওয়ার নাচন থামতে না থামতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে ঋতুরাজ বসন্ত। তাই তো প্রকৃতি আজ দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে। সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। আজ পহেলা ফাল্গুন ১৪২৮, ঋতুরাজের প্রথম দিন। ঝিরঝিরে দখিন হাওয়া প্রাণের উষ্ণতা সঞ্চার করছে শীতে মৃতপ্রায় প্রকৃতিতে। তাতে কোথাও না কোথাও মন উচাটন করে কুহু কুহু গান গাইছে কোকিল। প্রকৃতিতে জেগে ওঠা এই বিপুল প্রাণের স্পন্দন, বুনো ফুলের গন্ধমাখা বহতা বাতাস মানুষের মনেও এক অনির্বচনীয় গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে। ঘুচে যায় সব দ্বিধা-সংকোচের বাধা।

হিমেল হাওয়া অথচ তপ্ত নয়, আবার তপ্ত বাতাস অথচ হিমেলও নয় এ এক অপূর্ব অনুভূতির হাওয়া প্রকৃতিতে বয়ে চলে পুরো বসন্ত জুড়ে। ধরায় ফাগুন এসেছে গোলাপ-জবা-পারুল-পারিজাতের বুকের পরে। গাছের শাখা-প্রশাখায় পুরনো পাতার ভিড়কে পাশ কাটিয়ে দূর থেকে চেয়ে থাকার মতো তরুণীটি আজ বাসন্তী রঙের শাড়িতে বেরিয়ে এসেছে জমাট খোঁপায় হলুদ গাঁদার ফুল গুঁজে। তার হাতভর্তি কাচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ ঠিক যেন বুকে বাজে। তাঁকে হাত ধরে রাস্তা পার করা ছেলেটির পরনে লাল কোর্তা। হাতে ফুল নিয়ে দু’জনের স্মিত হাসি দিগন্ত ছুঁয়েছে। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে স্বমহিমায়। আর শহুরে বসন্তেও যেন সেই আত্মীয়তা। কানে কানে বলে যায়, ‘আজ ভুলিয়ো আপন পর ভুলিয়ো, আজ খুলিও হৃদয়-দুয়ার খুলিও।’

শীতে হতশ্রী প্রকৃতিকে লাবণ্য সুষমা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যেমন ঋতুরাজ বলে বসন্তের খ্যাতি, তেমনি সে যৌবন ও প্রেমের ঋতু হিসেবেও সমাদৃত হয়েছে বাঙালির কাছে। বসন্ত বাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম তাই গেয়ে ওঠেন- ‘বসন্ত বাতাসে… সই গো.. বসন্ত বাতাসে.. তোমার বাড়ির ফুলের গন্ধ.. আমার বাড়ি আসে!’ প্রাকৃতিক রূপ-রস-গন্ধের মহাসমারোহের কারণেই তাকে প্রেমের ঋতু বলাটা মোটেও অত্যুক্তি হয় না। এ ঋতুতে প্রকৃতি নিজেকে অন্যরূপে সাজিয়ে তোলে। বাগানজুড়ে ফুল-ফল, শাখে শাখে নতুন পাতা, দিকে দিকে পাখির কলতান, দখিন হাওয়া, নতুন প্রাণ, অনাবিল প্রেম- এমনি এমনি তো আর ঋতুরাজ আখ্যা পায়নি বসন্ত!

কেবল উপমহাদেশীয় অঞ্চলেই নয়, বসন্ত পশ্চিমেও কম ছুঁয়ে যায় না। যেটি কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী জন ডেনভার যেনো সবচেয়ে গভীরভাবে বলেছেন, ‘ইউ ফিল আপ মাই সেনসেস, লাইক দ্য মাউন্টেইনস্ধসঢ়;‌ ইন স্প্রিং টাইম…’। আমাদের বসন্তদিন, পশ্চিমাদের স্প্রিং টাইম। বিশ্বের দিকে দিকে নানাভাবে বসন্ত বরণ বা বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হয়। বসন্ত মানে নতুন, বসন্ত মানে আনন্দ। ঠিক যেন- ‘সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা’।

বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কারণে বাংলা ফাগুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস পড়েছে একই দিনে। আগে ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে ফাগুন মাসের প্রথম দিন উদযাপন হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। তবে এখন দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে। বাংলার বসন্তের সঙ্গে পশ্চিমা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে। বসন্তের ঝিরঝির বাতাসে আজ হারিয়ে যাচ্ছে প্রেমিকযুগল। সব আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসার গভীরতা। উতলা হাওয়ার এমন দিনে মনের মানুষটির দিকে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়ে বলছে, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি।’ আজ ভালোবাসার জয় হবেই। আজ যে ভালোবাসার দিন, ভ্যালেন্টাইনস ডে।

বসন্ত নিয়ে রচিত হয়েছে অজস্র গান আর কবিতা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তের খোলা হাওয়ায় মন মাতিয়ে কখনো গেয়েছেন, ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়’। আবার কখনো স্বপ্নবিভোর হয়ে রচনা করেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে করো না বিড়ম্বিত তারে’।

আজও কি ওপারের দেশ থেকে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর গাইছেন সেই গান-‘পাখি আজ কোন সুরে গায়.. কোকিলের ঘুম ভেঙে যায়.. আজ কোনো কথা নয়.. শুধু গান আরো গান.. আজ বুঝি দু’জনের মন.. কতো সুরে করে আলাপন.. আজ কোনো কথা নয়.. শুধু গান আরো গান…।’

পাঠকের মতামত: