কক্সবাজার, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

স্কুলে ভর্তির লটারি তালিকায় এক শিক্ষার্থীর নাম ১৪ বার!

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির ডিজিটাল লটারির ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর ওয়েবসাইটে এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি সংক্রান্ত লটারির ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

এদিকে ফল প্রকাশের পর বিভ্রাট দেখা দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের ভর্তি তালিকায়।

প্রকাশিত ফলাফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তির ফলাফলে তাহিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর নাম ১৪ বার উঠেছে। এর মধ্যে মেধা তালিকায় ১০ বার ও অপেক্ষমাণ তালিকায় চারবার তার নাম রয়েছে।

একইভাবে ফারিয়া জামান জেসি ও ফারিয়া আরফা নামে এক শিক্ষার্থীর নাম পাঁচবার উঠে। একই ছবি ও জন্মনিবন্ধন নম্বরে ফারিয়া জামান জেসি ও ফারিয়া আরফা নামে পৃথক নাম রয়েছে তালিকায়। এ ধরণের ‘অদ্ভুত’ ফলাফলে নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টি নিয়ে হতবাক। তবে কি কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৪১ জন ভর্তির জন্য আবেদন নেয়া হয়। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিতদের তালিকা সোমবার বিকেলে স্কুলের ফটকে লাগিয়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ফলাফল দেখতে ভিড় জমে।

ফলাফলে দেখা যায়, তাহিয়া নামে এক শিক্ষার্থীর নাম মেধাতালিকায় ১০ বার ও অপেক্ষমাণ তালিকায় ৪ বার রয়েছে। ফলাফলে তাহিয়ার একই ছবি রয়েছে। তবে একাধিক জায়গায় জন্মনিবন্ধন ও মোবাইল নম্বর ভিন্ন। সেখানে পিতা-মাতা ও মোবাইল নাম্বার একই লিখা থাকলেও আবেদনের ইউজার আইডি নম্বর ভিন্ন ভিন্ন লেখা আছে। তাহিয়ার বাবার নাম রুবেল মিয়া ও মা লাভলী বেগম। তাহিয়ার নাম মেধা তালিকার ৫, ১৩, ১৭, ২৪, ৩২, ৩৬, ৬৬, ৬৭, ৯৮, ১১৬ তে রয়েছে। অপেক্ষমাণ তালিকার ৮১, ১০৮, ১১৬ ও ১১৮ তে রয়েছে।

একইভাবে ফারিয়া জামান জেসি নামে আরেক শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকায় তিনবার ও ফারিয়ার আরফা দুইবার রয়েছে। ফারিয়ার ক্ষেত্রে সব ছবি এক থাকলেও নামের ক্ষেত্রে কোথাও ফারিয়া জামান জেসি, ফারিয়া আরফা রয়েছে। তবে জন্মনিবন্ধন নম্বর ও মোবাইল নম্বর একই রয়েছে। ফারিয়ার বাবার নাম আবু জামিল ও মায়ের নাম তানিয়া আক্তার।

ফারিয়ার জামানের নাম ১, ১০৮, ১৩৩, ফারিয়া আরফা নাম মেধাতালিকার ৯৩ ও ১৩৫ এ রয়েছে। লটারির ফলাফল দেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে নিশ্চিত অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। একই ইউজার আইডি, নাম, পরিচয় হলে বুঝতে পারতাম ভুলে এসেছে। কিন্তু একই শিক্ষার্থী আলাদা ৮ বার কিভাবে আবেদন করে ইউজার আইডি পেল?

বিনয় ঘোষ নামে এক অভিভাবক বলেন, আমি আমার মেয়ের ভর্তির ফলাফল দেখতে এসেছিলাম। এসে দেখলাম আমার মেয়েসহ শতশত মেয়ে লটারিতে বাদ পড়েছে। কিন্তু এমন মেয়ে দেখলাম, যাদের নাম তালিকার একাধিকবার এসেছে। এই ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হলে খুশি হবো। আরেক অভিভাবক বলেন, একই বাচ্চা ১৪ বার আর ৫ বার পেয়ে গেল। আর একজন একবারও না। এখানে অন্য বাচ্চারা সুযোগ পেতে পারতো।

এই বিষয়ে গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পারভীন আক্তার বলেন, এই ঘটনাটি কিভাবে ঘটলো আমি বলতে পারবো না। সম্পূর্ণ বিষয়টি অনলাইনে হয়ে থাকে ঢাকা থেকে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হোসেন বলেন, গভ. মডেল গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি জানাতে উনাকে বলা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. জিয়াউল হক মীর বলেন, অনলাইনে লটারির বিষয়ে সম্পূর্ণ ঢাকা থেকে দেখা হয়। সেখানেও বদল করার সুযোগ নাই। ওই শিক্ষার্থীদের নাম বহুবার আসলেও সে একবারই ভর্তি হতে পারবে। বাকী গুলো ওয়েটিং লিস্ট থেকে পূর্ণ করা হবে। আর একজন শিক্ষার্থী কিভাবে এত গুলো ইউজার আইডি ব্যবহার করলো, তা শিক্ষা অধিদপ্তর ভাল বলতে পারবে।

পাঠকের মতামত: