কক্সবাজার, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

২৫ বছর ধরে বন্ধ ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ

ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথের স্টেশন ভবনগুলোয় আগাছা জন্মেছে। দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। দীর্ঘ ২৫ বছর পরিত্যক্ত থাকায় লাইনের অনেক স্থানে রেললাইন ও স্লিপার চুরি হয়ে গেছে। রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। বেদখল হয়ে যাচ্ছে রেল বিভাগের রক্ষিত আটটি স্টেশনঘর, সরঞ্জাম ও বিভিন্ন সম্পত্তি। ২০১৯ সালে পুনরায় ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ চালু করার জন্য সমীক্ষা হয়। তারপর থেকে এই উদ্যোগ নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি। স্থানীয়রা রেলপথটি চালুর দাবি জানিয়েছেন। 

জানা যায়, পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া সীমান্ত স্থলবন্দরের পাশে অবস্থিত বিলোনিয়া রেল স্টেশন। ১৯২৯ সালে আসাম বেঙ্গল রেল কোম্পানি ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি নির্মাণ করে। ফেনীর সঙ্গে আসামের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রেলপথটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় এই পথ দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করত। ব্যবসায়ীরা পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করতেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে যাত্রী চলাচল ও পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও ফেনী থেকে বিলোনিয়া সীমান্ত পর্যন্ত ছোট ছোট আটটি স্টেশন ছুঁয়ে রেলপথটি চালু ছিল। স্টেশনগুলো ছিল বন্দুয়া, দৌলতপুর, চিথলিয়া, পীরবক্স মুন্সীর হাট, নতুন মুন্সীর হাট, ফুলগাজী, পরশুরাম ও বিলোনিয়া সীমান্ত স্টেশন। ১৯৯৭ সালে সরকার রেলপথটি অলাভজনক দেখে বন্ধ করে দেয়।

রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের পাশেই এই রেল স্টেশন। রেলপথটি চালু হলে ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ায় সুবিধা এবং সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে। আমদানি-রপ্তানিকারক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ও কুমিল্লা চেম্বারের সহসভাপতি জামাল আহম্মেদ জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলবন্দরসংলগ্ন বিলোনিয়া রেলপথটি চালু হলে বাংলাদেশ থেকে অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড রপ্তানি সহজলভ্য হবে। অন্যদিকে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি সহজ হবে। ফেনী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আইনুল কবির শামীম জানান, ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি অনতিবিলম্বে সরকার চালু করবে, এটি ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি। তিনি আশা করেন, রেল মন্ত্রণালয় রেলপথটি চালুর ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

রেলপথটি চালুর ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী রিটন চাকমা বলেন, বাংলাদেশের অপর প্রান্তে ভারতের বিলোনিয়া ও ত্রিপুরায় ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে রেলপথে বাণিজ্যের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রযুক্তিগত কাজ শেষ করেছে। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে বিলোনিয়া রেলপথটি পুনরায় চালুর জন্য বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের হায়দ্রারাবাদে আরভে অ্যাসোসিয়েটস্ আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট কোম্পানিকে রেলপথের প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা যাবতীয় জরিপকাজ শেষ করে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি পুনরায় চালুর চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়।

ফেনী রেলস্টেশনের মাস্টার সফিকুর রহমান ভূঞা জানান, বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো সরকারের সেবামূলক পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে যে রাজস্ব পাওয়া যায়, তার কয়েক গুণ সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু মালবাহী ট্রেনের খরচ অত্যন্ত কম। এই ট্রেনে এক জন সহকারী চালক ও এক জন গার্ড দিয়ে মালামাল পরিবহন করে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হওয়ার কথা। ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি চালু হলে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

পাঠকের মতামত: