কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পাওনা টাকা ও সর্ম্পকের জন্য হত্যা করা হয় কক্সবাজারে মোহছেনাকে!

মুকুল কান্তি দাশ::

পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে এনে মোহছেনা আক্তারকে হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করেছেন হত্যাকান্ডে জড়িত মো.রিদুয়ান। গত বৃহস্পতিবার (২৭জানুয়ারি) আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তিনি হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। গত মঙ্গলবার (২৫জানুয়ারি) পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার নুইন্যমুইন্যা ব্রিজের নিচে থেকে হাত-পায়ের রগ কাটা এবং ছুরিকাহত অবস্থায মাহছেনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে মো.আরিফ বাদি হয়ে মো.রিদুয়ানকে প্রধান আসামী করে পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত মোহছেনা আক্তার কক্সবাজারের সদর উপজেলার খাজামঞ্জিলের ছাবের আহমদের মেয়ে ও মৃত মো.তৈয়বের স্ত্রী।

মামলার পরপরই র‌্যাব-১৫ এবং কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলম ও পেকুয়া থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে মো.রিদুয়ান ও মো.সুজন (২৪) কে গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারকৃত মো.রিদুয়ান চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আবদুল হালিমপাড়ার নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদার ছেলে এবং মো.সুজন একই এলাকার সাজেকঘোনার কবির হোসেনের ছেলে।
আদালতের বরাত দিয়ে পেকুয়া থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিদুয়ান গত ৪/৫ বছর আগে অবৈধ পথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যায়। ওখানে গিয়ে মোহছেনার স্বামী মো.তৈয়বের সাথে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হয়। এরসুত্র ধরে তৈয়বের স্ত্রী মোহছেনার সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে রিদুয়ানের। এরমধ্যে মোহছেনার স্বামী মো.তৈয়ব মালয়েশিয়ায় মারা যায়। পরে তৈয়বের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য সহযোগিতা করেন রিদুয়ান। গত বৃহস্পতিবার দেয়া চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেন।

রিদুয়ান আদালতকে বলেন, মোহছেনার স্বামী মো.তৈয়ব মারা যাওয়ার বছরখানেক পর মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করে জেল কেটে দেশে চলে আসেন মো.রিদুয়ান। দেশে এসে রিদুয়ান কক্সবাজারে যান মোহছেনার পরিবারের সাথে দেখা করতে। এরপর থেকে মোহছেনা ও রিদুয়ানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়। এরমধ্যে মোহছেনা রিদুয়ানের বাড়ি কোণাখালীতেও আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু বিষয়টিকে মোটেও ভালো চোখে দেখেননি রিদুয়ানের স্ত্রী কামরুন্নাহার। পরে কামরুন্নাহার বিষয়টি মোহছেনার বড় ছেলে মো.আরিফকে জানান।

এসআই মোজাম্মেল হোসেন আরও বলেন, গভীর সর্ম্পকের সুত্র ধরে রিদুয়ান ব্যবসার কথা বলে মোহছেনার কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা নেন বলে দাবি করেন ছেলে আরিফ। তবে রিদুয়ানের দাবি একলক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন মোহছেনার কাছ থেকে। ইতোমধ্যে ৫০-৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন বলে দাবি করেন রিদুয়ান। বাকি পাওয়া টাকার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে খুব জ্বালাতন করছিলো মোহছেনা। এই টাকা না দিতে রিদুয়ান মোহছেনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি রিদুয়ান তার বন্ধু রাজমেস্ত্রী মো.সুজনের সাথে আলাপও করেন। যেই কথা সেই কাজ। হত্যাকান্ডের জন্য কেনা হয় ধারালো ছুরি।

হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রিদুয়ান পাওয়া টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য মোহছেনাকে চকরিয়ায় আসতে বলেন। কথানুযায়ী মোহছেনা ওইদিন বিকালের দিকে কক্সবাজার থেকে চকরিয়া স্টেশনে নামেন।

এসময় রিদুয়ান ও মো.সুজন মিলে মোহছেনাকে নিয়ে চকরিয়ার একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তাও করেন। রিদুয়ান ছল করে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেয়ার কথা বলে তারা একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে বেতুয়াবাজার হয়ে পেকুয়ার দিকে রওনা দেন। তাদের বহনকারী সিএনজিটি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নুইন্যামুইন্যা এলাকায় পৌছলে সুচতুর রিদুয়ান রাতে এক বন্ধুর বাসায় থেকে সকালে টাকা নিয়ে কক্সবাজার ফিরে যাওয়ার কথা বলে সিএনজি থেকে নেমে যায়।

পরে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নুইন্যামুইন্যা ব্রিজের নিচে বিল বেয়ে হাটা শুরু করেন। এসময় মো.সুজন তার কোমরের পিছনে লুকিয়ে রাখা ছুরি বের করে মোহছেনার বুকে পরপর সাতবার ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে চিৎকার করে মোহছেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রিদুয়ান ও সুজন ছুরি দিয়ে মোহছেনার পা ও হাতের রগ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায়।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, মোহছেনা নামের নারী হত্যাকান্ডের পর থেকে সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলমের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশ টিম মাঠে নামে ঘটনায় জড়তিদের গ্রেপ্তার করতে। পরে র‌্যাব-১৫ ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত রিদুয়ান ও সুজনকে গ্রেপ্তার করি।

গত বৃহস্পতিবার তাদের দুইজনকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে তারা হত্যার দ্বায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মুলত আর্থিক লেনদেন ও দু’জনের মধ্যে সর্ম্পকের কারণে এই হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত: