কক্সবাজার, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

মেজর সিনহা হত্যার রায়: কক্সবাজার ঘিরে নিরাপত্তা

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে মারা যান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার দেড় বছর পর আগামীকাল সোমবার এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আদালত দিন নির্ধারণ করেছেন। ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের কী শাস্তি হবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল-আলোচনা রয়েছে। তবে ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষীতের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে মেজর সিনহার পরিবার।

এদিকে রায়কে ঘিরে কক্সবাজারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্য ও গোয়েন্দা নজরদারি। সকালে প্রিজন ভ্যানে আসামিদের আদালত প্রাঙ্গণে আনার পথে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের বাড়তি সদস্য উপস্থিত থাকবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আদালতের নির্দেশে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা থাকবে। মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত ফোর্স। বিচার চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণে সর্বসাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হবে। সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামি কক্সবাজার কারাগারে আছেন। সকালে প্রিজন ভ্যানে আসামিদের আদালত প্রাঙ্গণে আনা হবে।

র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত করেছি। প্রথম থেকেই আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার পথে বাড়তি নিরাপত্তা দিয়েছি। আগামীকাল র‌্যাবের বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও পেট্রোলিং থাকবে। তাছাড়া সাদাপোশাকে আমাদের সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করবে।’

এদিকে মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ১২ জানুয়ারি রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিনটি ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। রায়কে ঘিরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা কক্সবাজারে এসেছেন।

মেজর সিনহা হত্যার আসামি ওসি প্রদীপের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে তার পরিবার। এ ছাড়া অন্য আসামিদেরও অপরাধের ভিত্তিতে সাজা হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

শুধু সিনহা হত্যাই নয়, ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক নিরাপরাধ মানুষ। তাদেরই একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী তার দুই মেয়েকে ধর্ষণে ওসি প্রদীপের জড়িত বলে দাবি করেছেন। তিনি মেজর সিনহা হত্যার রায়ের দিন নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে প্রদীপের যেন ফাঁসি হয় এজন্য রোজা রাখছেন, সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে যাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, আমাদের আশা, সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ অভিযুক্ত আসামিদের। করোনা মহামারির মধ্যেও স্বল্প সময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে বন্ধ হবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

মামলায় অভিযুক্ত যারা

২০২০ বছরের ৩১ জুলাই হত্যাকাণ্ডের পর ৫ আগস্ট পুলিশের নয় সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। চার মাস দশ দিন পর কক্সবাজার আদালতে ২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেয় র‍্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যার ঘটনাটি ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগপত্রে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল ছাফানুল করিম, বরখাস্ত কনস্টেবল কামাল হোসাইন আজাদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী, বরখাস্ত কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও মো. রাজীব হোসেন, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নেজামুদ্দিন।

পাঠকের মতামত: