কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিত্যপণ্য সরবরাহের আড়ালে সক্রিয় মাদক সিন্ডিকেট

করোনায় সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রায় পুরো নজর এখন চিকিৎসা খাতে। এমন বাস্তবতার সুযোগ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাদককারবারিরা। অপেক্ষাকৃত ঢিলেঢালা নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে নিত্যপণ্যের গাড়িতে করে অভিনব কায়দায় পাচার হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিলের মতো মাদক। বিশেষ করে কাঁচাসবজি, শিশুখাদ্য, মাছের মতো নিত্যপণ্যের যানকে প্রধান টার্গেটে পরিণত করেছে মাদককারবারিরা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের লকডাউন বাস্তবায়নসহ করোনা ভাইরাসবিষয়ক নানা কাজে যুক্ত থাকতে হচ্ছে পুলিশ-র‌্যাব সদস্যদের। এ সুযোগে বিভিন্ন অভিনব পন্থা অবলম্বন করে মাদক চোরাচালানের ঘটনা বেড়ে যায়। তবে এখন লকডাউন তুলে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকা- শুরু হচ্ছে। যাকে এখন বলা হচ্ছে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’। এমন বাস্তবতায় ট্রাফিক এবং অপরাধ ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এবারের অপরাধ ব্যবস্থাপনায় নিত্যপণ্যের সঙ্গে মাদক চোরাচালানের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ করোনাকালে মাদক পরিবহনের বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এটি।

গত ২১ মে রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে কাঁচাবাজার বহনকারী গাড়ি থেকে অস্ত্র ও ইয়াবার চালান উদ্ধার করে র‌্যাব। কক্সবাজার থেকে আসা গাড়ি থেকে ২টি বন্দুক, ৬ রাউন্ড গুলি ও ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। লকডাউনের ভেতর গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার পিকআপে জরুরি পণ্যের আড়ালে মাদক ও অস্ত্রের চোরাচালান করত। এ জন্য সাদা কাগজে গাড়ির সামনে ‘জরুরি প্রাণী খাদ্য উৎপাদন কাজে নিয়োজিত’ স্টিকার লাগিয়ে চলাচল করত চক্রটি। গত ৯ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার থেকে আলু বোঝাই পিকআপ ভ্যান থেকে ৫০০ বোতল ফেনসিডিলসহ ৫ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, সীমান্ত জেলা জয়পুরহাট থেকে আলুর মতো খাদ্যপণ্যকে সামনে রেখে মাদকের চালান নিয়ে ঢাকায় ঢোকে চক্রটি। চক্রটি নিয়মিত খাদ্যপণ্যের আড়ালে এভাবে মাদকপাচার করে আসছিল।

গত ২৮ মে সাভার ও আশুলিয়া থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে খাদ্যপণ্যের আড়ালে পাচার করার সময় দেড় কোটি টাকা মূল্যের দেড় কেজি হেরোইনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-সৈবুর রহমান (৩২) ও নাজমা আক্তার (২৮)। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কুরিয়ার সার্ভিসে শিশুখাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের আড়ালে হেরোইন পাচার করে আসছিলেন তারা। গত ১ জুন রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আসা একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ইয়াবার চালান জব্দ করে র‌্যাব। ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় জাকির হোসেন (২৮) নামে এক মাদককারবারিকে। ইয়াবাগুলো স্যাভলন সাবানের প্যাকেটে ভরা ছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য বিনামূল্যে প্রদান করা এসব সাবান বিভিন্ন হাত ঘুরে কালোবাজারে চলে আসে। ওই সাবানের চালান আবার রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সাবানের চালান ঢাকায় আনার আড়ালে চলত ইয়াবা পাচার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলাকালীন নিত্যপণ্যের যানবাহনকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সুযোগটি লুফে নিয়েছে মাদককারবারি সিন্ডিকেট। কাজে নিত্যপণ্যের চালানের দিকে দৃষ্টি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম আমাদের সময়কে বলেন, ‘সবজি, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের আড়ালে মাদকের চোরাচালান হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সাধারণ ছুটির মতো পরিস্থিতিকে তারা হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমন বেশ কিছু অভিযানও পরিচালনা করেছি। এ ধরনের অভিযান বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’

পাঠকের মতামত: