কক্সবাজার, রোববার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

উন্নয়নের জোয়ারে বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার

পর্যটননগরী সাগরকন্যা কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ স্থাপন একসময় স্বপ্নই ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছে বর্তমান সরকার। অল্প ব্যয়ে ট্রেনে দ্রুত সময়ে আসা যাওয়া করা যাবে সাগরকন্যার কাছে। সেও আর বেশি দূরে নয়, চলতি বছরেই হচ্ছে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন। শুধু কি তাই? রেল চালু হলে পর্যটক যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। সরকারের এমন উদ্যোগের ফলে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন- এমনটিই মনে করছেন স্থানীয়রা।

সরজমিনে দেখা যায়, পর্যটন শহর কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে তৈরি হওয়া দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। রেলপথ নির্মাণের কাজও চলছে পুরোদমে। আর এ বছরই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের পর্যটন খাত এগিয়ে যাচ্ছে আরও একধাপ। ভ্রমণপিপাসুরা সহজেই ছুঁয়ে দেখতে পারবেন সমুদ্রের জল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল রান হওয়ার কথা রয়েছে। আর তা আনুষ্ঠিত হতে পারে ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে যেখানে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ১২ ঘণ্টা, সেখানে ট্রেনে আসতে লাগবে মাত্র সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কমে আসবে পরিবহন ব্যয়ও। ঢাকা থেকে এসি বাসে যেখানে গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে ট্রেনের এসি চেয়ারে বসে কক্সবাজার আসতে লাগবে এক হাজার টাকার কিছু বেশি। ফি নির্ধারণেও কাজ চলছে ইতোমধ্যে।

 

ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। রেলপথ নির্মাণের ফলে বদলে যাবে কক্সবাজার, এই অঞ্চলসহ দেশের পর্যটনেও যোগ হবে নতুন দিগন্ত। অর্থনীতির চাকা ঘুরবে আরও দ্রুত। ঢাকার সঙ্গে ট্রেনের যোগাযোগ ও দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারবাসীও। তারা বলছেন, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা যোগ হবে ট্রেন যোগে। সরেজমিনে নবনির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে দোহাজারী কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরি বলেন, এই প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম তথা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রানের চেষ্টা করবো। ট্রায়াল রানের পর কমার্শিয়াল রানে যেতে আরও দুই তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করবো।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেইসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য কক্সবাজার হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। তবে এখনো ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।

ট্রেনের ভাড়া কেমন হবে জানতে চাইলে আবুল কালাম চৌধুরি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্তনগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মতো, এখানে হয়তো ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

জানা গেছে, সরকার দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকটবর্তী গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। ২০১০ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০.৮৩১ কিলোমিটার সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। আর এই অংশেরই ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ২৮.৭৫২ কিলোমিটার সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলা হয়েছে, এর ফলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওর্য়াক-এর আওতায় আনার উদ্দেশ্য হলো পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ পন্য পরিবহন করা।

যা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা : শনিবার দুপুরে নবনির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের সামনে কথা হয় নগরীর বাহারছড়ার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে। মহেশখালী থেকে আসা এক বন্ধুকে নিয়ে স্টেশন দেখতে এসেছিলেন তিনি। আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘কক্সবাজারে রেলওয়ে হওয়ার ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্যে আলাদা সুবিধা তৈরি করবে। সবাই খুব খুশি। রেলপথ হচ্ছে, পর্যটক বেশি আসবে। ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। এজন্যে কক্সবাজারবাসী হিসাবে সবাই সরকারকে ধন্যবাদ দিচ্ছে।

কক্সবাজারের সুগন্ধা বীচে কথা হলো কুতুবদিয়ার বাসিন্দা রবিউল আউয়ালের সঙ্গে। তিনি বলেন, বীচের কাছে আমাদের হোটেলের ব্যবসা রয়েছে। এখানে ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। রেলস্টেশন হলে মানুষ সহজে ট্রেনে আসতে পারবে। এখানে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। আমরা অনেক উপকৃত হবো। সরকার আমাদের জন্য এই কাজটি করেছে- এতে আমরা খুশি।

এই বীচের পাড়েই চায়ের দোকান রয়েছে শফিক আহমেদের। রেল যুগের নতুন দিগন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে আগের চেয়ে বেশি মানুষ কক্সবাজারে আসবে। এতে সুবিধা হবে সকলের। সুত্র: প্রতিদিনের সংবাদ

পাঠকের মতামত: