কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

কক্সবাজারে এখন অত্যাধুনিক লাল-সবুজ ট্রেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ট্রেনে চড়ে কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্বোধন করবেন; সেটি কক্সবাজার পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা সম্পূর্ণ নতুন লাল-সবুজের ১৫ বগিসহ ১৯টি কোচ নিয়ে যাত্রা করে ট্রেনটি। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে রাত ৬টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটিতে রেলের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। তারা ট্রেন পরিচালনা ও নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত।

এদিকে কালুরঘাট সেতুতে ট্রায়াল দেওয়া তিনটি ইঞ্জিনও কক্সবাজার নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ও বিকালে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ইঞ্জিন দুটি ছেড়ে যায়। কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত ৩০২৫ নম্বর নতুন ইঞ্জিনটি ১৯ বগি নিয়ে দুপুরে রওনা দেয়। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার উদ্ধারকারী একটি ট্রেন যাবে কক্সবাজার।

রেল কর্মকর্তারা জানান, ১৯টি বগির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যে ১৫টি বগির সমন্বয়ে গঠিত ট্রেন উদ্বোধন করবেন সেই বগিগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ অবস্থায় কক্সবাজার নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত চার বগিতে বসে কক্সবাজার গেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১৫ বগির মধ্যে রয়েছে- গার্ড ব্রেক ও খাবার গাড়ি দুটি, পাওয়ার কার দুটি, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ১০টি, এসি স্লিপার একটি। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া হুন্দাই রোটেমের তৈরি ও সানসিং রোলিং স্টক কোম্পানি লিমিটেড বগিগুলো দেশে পৌঁছে। অত্যাধুনিক এই বগিগুলো কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ ও সোনার বাংলা ট্রেনে যুক্ত হয়েছে।

জানা গেছে, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নির্দেশনায় গতকাল কড়া নিরপত্তার মধ্য দিয়ে ট্রেনটি কক্সবাজার নেওয়া হয়। সেখানে এসএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে তারা নির্দেশনা দিলে কক্সবাজার থেকে রামু স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়াল রান দেওয়া হবে। কক্সবাজার স্টেশনেই ট্রেনটি থাকবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী স্টেশন ভবনের ফলক উন্মোচন করে কক্সবাজার স্টেশনে আসবেন। এরপর ট্রেনে চড়ে বহুল কাক্সিক্ষত নতুন রেল সংযোগের উদ্বোধন করে রামু স্টেশন পর্যন্ত আসবেন। রামু থেকে মহেশখালী মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপর দলীয় সভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন সেটি গতকাল কক্সবাজার পৌঁছেছে। বিশেষ সতর্কতার সাথে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ এস্কর্ট দিয়ে নিয়ে যায়। উদ্বোধনের পর ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে রামু স্টেশনে বিরতির পর সরাসরি চট্টগ্রাম স্টেশনে চলে আসবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে স্টেশন, অপারেশন ও ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা সেখানে অবস্থান করছেন। বর্তমানে সব কিছুই এসএসএফ নিয়ন্ত্রণ করছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম জানান ৬টা ৪৫ মিনিটে তারা কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছেন।

ট্রেন ছাড়ার আগে চট্টগ্রাম স্টেশনে তিনি বলেন, স্পেশাল ট্রেনটিতে ১৫টি বগি রয়েছে। চারটি বগি অতিরিক্ত যুক্ত করে ১৯টি করা হয়েছে। কক্সবাজার স্টেশনে গিয়ে চারটি বগি আলাদা করা হবে। নতুন ১৫ বগিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তখন অতিরিক্ত বগি থেকে যুক্ত করব। উদ্বোধনের আগের দিন একটি উদ্ধারকারী ট্রেন যাবে কক্সবাজার। উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

উদ্বোধনের দিন ট্রেনের সামনে পেছনে দুটি ইঞ্জিন থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্বোধনী ট্রেনের আগে একটি পাইলট ইঞ্জিন থাকবে; সেটি লাইনে কোনো সমস্যা আছে কিনা দেখবে। সেটি থেকে ক্লিয়ারেন্স দিলে প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে উঠবেন, তাকে নিয়ে রামু পর্যন্ত যাবে। ট্রেন উদ্বোধনের জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন অপেক্ষা কেবল উদ্বোধনে।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে উদ্বোধনী ট্রেনটি চালিয়ে নিয়ে গেছেন সাজু কুমার দাস; সহকারী চালক ছিলেন বেলায়েত হোসেন জাহিদ। ট্রেনের পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ নুরুল আমিন।

গত রবিবার সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো একটি পরিদর্শন ট্রেন কক্সবাজার যায়। কক্সবাজার রেললাইনে সেটিই প্রথম ট্রেন; সেদিন বগি ছিল আটটি। তার আগের দিন শনিবার কর্ণফুলী নদীর ওপর শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর ওপর ইঞ্জিন ট্রায়াল দেওয়া হয়।
সুত্র :আমাদের সময়

পাঠকের মতামত: