কক্সবাজার, রোববার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, জেনে নিন মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়

হঠাৎ করেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও। ডেঙ্গু জ্বর মূলত এডিস এজিপ্টি (Aedes aegypti) মশার কামড়ে হয়। তবে সব মশার কামড়ে এ জ্বর হয় না। এই মশা তখনই ক্ষতিকর হবে যখন এই মশা ডেঙ্গু জ্বরে সংক্রমিত কোনো ব্যক্তিকে কামড় দেবে।

ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস তখন এই মশা বহন করবে এবং এই মশা যখন কোনো সুস্থ মানুষকে কামড় দেবে তখন ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন। আবহাওয়ার এই সময়ে একদিকে চলছে বৃষ্টি, অন্যদিকে গরম। পাশাপাশি বেড়েছে মশার উৎপাত। মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার ভয়ও রয়েছে। এ জন্য সচেতনতা প্রয়োজন আরও বেশি।

মশার কয়েল কিংবা স্প্রে তো আছেই, এমন পরিস্থিতিতে রাসায়নিক প্রতিরোধে দ্রুত সমাধান মিললেও অনেকেই খুঁজছেন তার নিজ বাড়িকে

মশামুক্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়।  পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে চেষ্টা করতে পারেন মশা তাড়াতে। আপনার আশ্রয়স্থলটিকে মশামুক্ত রাখার জন্য এমন কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক, যেখানে আপনার স্বাস্থ্য ও চারপাশের পরিবেশ দুই-ই ভালো থাকবে।

* লেবু খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢোকাবেন, শুধু লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোনায় রেখে দিন। ব্যস, এতে বেশ কয়েক দিন মশার উপদ্রব কমবে। আপনি চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। এতে করে মশা ঘরে ঢুকবে না।

লেবুর গন্ধ আর লবঙ্গের ঝাঁঝ কমাবে মশার উপদ্রব

* মশাকে বাড়ির বাইরে রাখার জন্য জানালার পর্দা টাঙানো যেতে পারে। জানালা ও দরজায় যেন কোনো রকম গর্ত বা ফাঁক না থাকে। মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়কে বাইরে রাখার জন্য নেট সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। কেননা এটি ঘরের ভেতর বাতাস চলাচল করতে দেয়। সন্ধ্যায় ও ভোরে যখন মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন জানালাগুলোর পর্দা টেনে দিলে ভালো কাজ দিতে পারে।

* ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। এভাবে ওই চা–পাতা ধুনার বদলে ব্যবহার করুন। শুকনা চা–পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সব মশা, মাছি পালিয়ে যাবে। কয়লা বা কাঠকয়লার আগুনে নিমপাতা পোড়ালে যে ধোঁয়া হবে, তা মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর।

* মশা গাঢ় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়, যেমন কালো, নীল আর লাল। মশা গরমের প্রতিও সংবেদনশীল। তাই ঠান্ডা রাখুন ঘর আর পোশাক পড়ুন হালকা রঙের।

* বাড়িতে মশার প্রবেশ কমাতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন, বিশেষ করে মশার উপদ্রবের সময়। সন্ধ্যায় ও ভোরের দিকে মশাসহ সব পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় ঘরের ভেতরের গুমোট পরিবেশ আরামদায়ক রাখতে সিলিং ফ্যান ছেড়ে রাখুন।

* রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়। পাঁচ ভাগ পানিতে এক ভাগ রসুনের রস মেশান। মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশা কামড়াতে পারে, সেসব স্থানে স্প্রে করুন।

* মশার বংশ নির্বংশ করতে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। শুধু জমে থাকা স্থির পানিই নয়, অন্যান্য ধুলাবালি, ময়লা, আগাছা, পোষা পশু-পাখির মল, অন্যান্য উদ্বৃত্ত নিয়মিত অপসারণ করুন। ঘরের ভেতরে শোকেস, ফার্নিচার ও ফুলদানির মতো লুকানো জায়গায় জমে থাকা পানি ও ময়লা খুঁজে বের করে তা পরিষ্কার করুন।

* থাই লেমন গ্রাসের সুগন্ধ কিন্তু মশাদের যম। আপনার আশপাশে লেমন গ্রাসের ঝাড় থাকলে মশারা আপনাকে খুঁজে পাবে না। লেমন গ্রাস দেখতেও মন্দ নয়।

 

মশা যে কোনো স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় জমে থাকা স্থির পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই আপনার বাড়ির চারপাশে উন্মুক্তভাবে জমে থাকা পানির উৎসগুলো নির্মূল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ফুলের পাত্র, পোষ্য প্রাণির ঘরে থাকা পাত্রের মতো যাবতীয় পানির পাত্রগুলো নিয়মিত খালি ও পরিষ্কার করতে হবে।

* ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন। জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা মতে তুলসির মতো পুদিনা পাতারও রয়েছে মশা দূরে রাখার ক্ষমতা। শুধু মশাই নয় পুদিনার গন্ধ অনেক ধরণের পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়েছে।

* মশারা সুগন্ধি থেকে দূরে থাকে। সুতরাং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, সুগন্ধি, কিংবা লোসন মেখে শুতে পারেন। নিশ্চিত করে বলা যায় এতে মশা সাধারণ থেকে অনেক কম দেখা যাবে।

ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, সেই সাথে এডিস মশা নিধনে এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। সর্বোপরি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের নিজেকে এবং আমাদের আশপাশের মানুষকে সুস্থ রাখতে সক্ষম হব।

পাঠকের মতামত: